চাকরি ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে নারী পাচারকারী চক্রের অভিযোগে দুই চীনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
এপিবিএন বলছে, চাঁদপুরের সুবর্ণা আক্তার নামে এক ভুক্তভোগীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি প্রথমে এপিবিএনের নজরে আসে।
মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি (কমান্ডিং অফিসার) মোহাম্মাদ সিহাব কায়সার খান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, গত সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চীনা নাগরিক দুইজন হলেন- ফ্যান গোউয়ে (২৭) ও ইয়াং জিকু (২৫)।
সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দরে এপিবিএন অফিসে সুবর্ণা জানান, ফ্যান গোউয়ে একজন চীনা নাগরিক এবং তাকে চীনে পাচারের চেষ্টা করছে। বর্তমানে সে চীনে যাওয়ার উদ্দেশে এয়ারপোর্টে অবস্থান করছে। অভিযোগকারীর তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত এসপি অনিতা রানী সূত্রধর তার সহযোগী ফোর্সসহ বোর্ডিং লাউঞ্জ-৫ এ অভিযুক্ত চীনা নাগরিককে আটক করেন। পরে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দুজনকেই এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিকুঞ্জের একটি বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইডির টিএইচবি সেল, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন নিকুঞ্জের সেই বাড়িতে যৌথ অভিযান চালায়। সেখান থেকে তারা ইয়াং জিকু নাকে আরেকজন চীনা পাচারকারীকে আটক করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাকিরা পালিয়ে যায়।
এপিবিএন আরও বলছে, দুই বছর আগে টিপু এবং জিহাদ নামে দুজনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ফেসবুকে বন্ধুত্ব হয়। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা হতো। কথাবার্তার একপর্যায়ে জিহাদ তাকে চাইনিজ কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাবে রাজি হলে টিপু এবং জিহাদ গত ২৬ অক্টোবর ভুক্তভোগীর নিজ বাড়ি থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। তারা ভুক্তভোগীকে ঢাকায় খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ-১ এর একটি বাড়িতে নূরুর কাছে নিয়ে আসে।
ইয়াং হও নামে একজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ের নাটক সাজায় নূরু। ওইদিনই তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা ওই বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই বাড়িতে আরও ৭-৮ জন চীনা নাগরিক ও আরও নারীকে দেখেছেন বলে ভুক্তভোগী জানান। এর মধ্যে পাচারকারীচক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীর পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করে এবং ভুক্তভোগীকে নিকুঞ্জের বাসায় আটকে রাখে। গত সপ্তাহে ভুক্তভোগীর কথিত স্বামী ‘ইয়াং হও’ চীনে চলে যায়। পরে পাচারকারীচক্রের সদস্য ফ্যান গুয়াই পাচার করার জন্য গত সোমবার ভুক্তভোগীকে বাসা থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। বিমানবন্দরে এনে ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সেটিংস-এর ভাষা চাইনিজ ভাষায় রূপান্তর করে ফেরত দেয়। সুযোগ বুঝে ওই নারী এয়ারপোর্ট এপিবিএন অফিসে সাহায্য চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন। গতকাল ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিও অ্যাডিশনাল ডিআইজি শিহাব কায়সার খান জানান, বেশ কিছু দেশের মানব পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টা করছে। তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করি।
আপনার মতামত লিখুন :