হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন ছেলে।তার পাশে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ বাবা মোজাহার। কখনও মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কখনও বা পাশে বসে ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন। ছেলেকে মারপিট করে গুরুত্বর আহত করা হয়েছে। তাই চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছেন নওগাঁ সদর হাসপাতালে। এর আগে তাকে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
শনিবার ১১ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় বিদেশ ফেরত ছেলেকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। শ্বশান ঘাটে (যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মরা মানুষের দাহ করা হয়) নিয়ে গিয়ে গোপন স্থানে (পাছায়) মারপিট করে রক্তাক্ত করেছে ওই যুবদল নেতার নেতৃত্বে ২০-৩০ জন। অবশেষে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে ছেলের জীবন ফেরত পেয়েছে পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি বিকেলের দিকে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের বিষঘরিয়া গ্রামে।
মারপিটের শিকার ওই যুবকের নাম আলমগীর (৩৫)। তিনি বিষঘরিয়া গ্রামের মোজাহারের ছেলে। আর অভিযোগ ওঠা ইমরান একডালা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ন সম্পাদক ও চকারপুকুর এলাকার মৃত সোলাইমান সরদারের ছেলে।
এদিকে অভিযোগ ওঠা ইমরানের দাবি তারা এ কাজের সাথে জড়িত নয়। অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দাবি যুবদলের ইমরানের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। তাই তাদের বিচার হওয়া উচিত।
ভূক্তভোগী আলমগীর হাসপাতালের বেডে শুয়ে থেকে অভিযোগের সুরে জানালেন, আমি গত দুই মাস হবে বিদেশ থেকে এসেছি। আসার পর মোসারব ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে চলাফেরা করি। আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত না। তারপরও তারা আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল। দিতে অস্বীকার করায় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ইমরান, বাদশা, ডলার ও শাহজাহানসহ প্রায় ২০-৩০ জন মোটরসাইকেলযোগে আমার বাড়িতে এসে অফিসে কথা হবে বলে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে আবাদপুকুর বাজারের একটি স্কুলের পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে মারপিট শুরু করে। ওখানে লোকজন জড়ো হতে থাকলে হরিপুর পৈদীঘি নামক শ্বশান ঘাট, যেখানে মরাপুরে ওখানে নিয়ে যায়। এরপর করজগ্রাম ও মাধাইমুড়ির মাঝখানে আরেক শ্বশান ঘাটে নিয়ে যায়। সেখানে শুরু হয় আমার উপর নির্যাতন। এরপর আমি বাধ্য হয়ে বাড়িতে জানালে বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে আসে। ফলে আমি জীবন ফিরে পাই। এরমধ্যে তারা আমার কাছ থেকে সাদা চারটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি ওদের বিচার চাই।
ছেলেকে চাঁদার জন্য মারপিট করায় একইভাবে বিচার চাইলেন বাবা মোজাহার। তিনি বলেন, চাঁদা দিতে না চাইলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করবে, এটা কেমন কথা। তাও আবার নির্ঝণ এলাকা শ্বশান ঘাট? প্রশ্নের সুরে বলেন তিনি। চাঁদার দুই লাখ টাকা না দিলে, তারা হয়তো আমার ছেলেকে মেরে ফেলতো। তাই আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকে একডালা ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ন সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ইমরান মুঠোফোনে বলেন, আমি কিছুই জানিনা। তারা যে অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। শত্রুতার জেরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একজন আরেকজনের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
আলমগীরকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারপিট ও চাঁদা নেওয়ার কথা স্বীকার করে রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোসারব হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। দুই লাখ টাকা নিয়েছে এবং প্রচুর মারপিট করেছে জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিএনপির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। আমি মনে করছি শতভাগ ওদের বিচার হওয়া দরকার। তারা যেন ভবিষ্যতে এধরনের কার্যকলাপ আর না করতে পারে। কারণ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিএনপির দলে কোন স্থান নেই।
যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক ইমরানের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি জানান।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ তারিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, গত শুক্রবার ১০ জানুয়ারি অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত শুরু করেছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
আপনার মতামত লিখুন :