ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

ভাতা বন্ধ দেড় বছর: অফিসে গিয়ে জানলেন তিনি মৃত

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০২:০৭ পিএম

ভাতা বন্ধ দেড় বছর: অফিসে গিয়ে জানলেন তিনি মৃত

ছবি- সুরধ্বনী রানী কর।

দীর্ঘদিন ধরে মোবাইল নম্বরে বয়স্ক ভাতা আসছিল না সুরধ্বনী রানী করের। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান -মেম্বারের কাছে গিয়েও কোন সুরাহা পাননি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গিয়েছেন। তাই তাঁর স্থলে অন্যজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে।এমন খবরে চমকে যান সুরধ্বনী রানী কর।

তবে সমাজসেবা অফিসে দীর্ঘ সময় ঘুরে অসংখ্যবার আশ্বাস পেলেও এখনও ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি তাঁর। শেষে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন সাংবাদিকদের।

সুরধ্বনী রানী কর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়ের নওয়াগাঁও গ্রামের মৃত নরেন্দ্র চন্দ্র করের স্ত্রী। তাঁর জন্ম ১৯৪৭ সালে। ৭-৮ বছর ধরে তিনি বয়স্ক ভাতা পেয়ে যাচ্ছিলেন। ভাতা প্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পরও তিনি মোবাইল নম্বরে ভাতা পেয়ে যাচ্ছিলেন। গত দেড় বছর আগে হঠাৎ তাঁর মোবাইল নম্বরে ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী  সুরধ্বনী রানী কর বলেন, প্রায় দুই বছর আগে ভারতে ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলাম। দুই মাস পর চলে এসেছি। তার কিছুদিন পর থেকে মোবাইল নম্বরে আর ভাতা পাচ্ছিলাম না। কয়েক মাস পর মেম্বারের কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালাম। পরে চেয়ারম্যানকে জানালাম। তাঁরা বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। কিন্তু সমাধান পাইনি। পরে স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি- আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার স্থলে  অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে অফিসের লোকজন পূনরায় ভাতা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু এভাবে কয়েক মাস চলে গেলেও ভাতা আর পাচ্ছি না।

সুরধ্বনী রানী কর আরও বলেন, দুই ছেলে রেখে  ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। এক ছেলে ছোট বেলায় হারিয়ে গেছে। আরেক ছেলে দিনমজুরি করে পরিবার নিয়ে কষ্ট করে চলে। দুই বছর আগে ভারতে খোঁজ মিলে হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলের। পরে সে এসে আমাকে ভারতে নিয়ে গিয়েছিল বেড়ানোর জন্য। দুই মাস পর দেশে ফিরে এসে দেখি আমাকে মৃত দেখি অন্যজনকে ভাতা দেওয়া হয়েছে। 
বয়সের কারণে শরীরে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে। গরীব মানুষ  ভাতার টাকাটা পেলে ওষুধ কিনে অন্তত খেতে পারতাম।
ভাতা ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি  জীবিত মানুষকে যারা মৃত বানিয়েছে তাদের বিচারও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে আজ সোমবার দুপুরে গিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে তাঁর অফিসে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনে একাধিকবার  কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তবে অফিসে থাকা তেতুলিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমাজকর্মী শেফালি আক্তার বলেন, সুরধ্বনী রানী করের বিষয়টি আমরা জানি। তাঁকে মৃত দেখিয়ে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির দেওয়া মৃত্যু সনদের ভিত্তিতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই এটা করা হয়েছে। তবে যেহেতু তিনি জীবিত তাঁর ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ওই ওয়ার্ডে কোন ভাতাভোগী মারা গেলে তার স্থলে সুরধ্বনী রানী করকে ভাতাভোগী করা হবে। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও আগে যে নাম্বারে ভাতার টাকা পেতেন সেগুলো নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, সুরধ্বনী রানী কর দেড়-দুই মাস ভারতে ছিলেন। সেটা আমার জানা ছিল না। মৃত ভাতাভোগী প্রতিস্থাপন করার সময় এলাকার শিক্ষিত একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির পরামর্শে নামের ভুলে তাঁর (সুরধ্বনী রানী কর) স্থলে অন্য একজনকে ভাতাভোগী করা হয়েছে। আমি এতটা খোঁজ খবর নিতে পারিনি।  পূনরায় তাকে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে তেতুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জহর বলেন, সুরধ্বনী রানী কর দুই বছর দেশে ছিলো না। মানুষ মনে করেছে হয়তো তিনি মারা গেছেন। তাই হয়তো এমনটা হয়েছে। 
ওই মৃত্যু সনদে আপনারও স্বাক্ষর রয়েছে।  সঠিকভাবে খোঁজ-খবর না নিয়ে মনগড়া মৃত্যু সনদ দেওয়া কি ঠিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি মূলত মেম্বাররা নিশ্চিত করে সনদ তৈরি করেন। চেয়ারম্যান এতে শুধুমাত্র প্রতিস্বাক্ষর দেন। এর দায় মেম্বারের। সুরধ্বনী রানী করের ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে। তবে মৃত্যু সনদের জন্য সুরধ্বনী রানী করের যে আইনি সমস্যা সেটা হয়তো সমাধান করা যাবে না।

বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!