ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

ছিকরাইলে হাওরপারে খেজুরের রস খেতে উপচে পড়া ভিড়

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম

ছিকরাইলে হাওরপারে খেজুরের রস খেতে উপচে পড়া ভিড়

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

‘খেজুরগাছে হাঁড়ি বাঁধো মন/ নইলে রস গড়িয়ে গোড়া পচে অকালে হবে মরণ’ গানটি যেন কানের কাছে বেজে চলেছে।
 

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ছিকরাইলে হাইল হাওরপারের একটি মাছের খামারে বেড়ে উঠেছে এসব খেজুরগাছ। হাওরপারের মাছের খামারে সারি সারি খেজুরগাছ। হাওরপারে গা ছুঁয়ে, প্রতিবেশী হয়ে হেলানো শরীরে দাঁড়িয়ে আছে তিন শতাধিক খেজুরগাছ। এসব গাছের গলায় মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিচ্ছিলেন কয়েকজন ‘গাছি’। ‘গাছিরা’ খেজুরগাছের ওপরের দিকে নির্দিষ্ট স্থানটি বাটালি দিয়ে ছেঁচেকেটে হাঁড়ি বাঁধছিলেন। এক-দুই ফোঁটা করে সেই হাঁড়িতে রাতভর রস জমবে। ভোরে শুরু হবে রস তোলার কাজ। রসের টানে অনেক মানুষ ছুটে আসেন এই হাঁড়ির কাছে। 

 

টাটকা খেজুর রসের টানে কাকডাকা ভোর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য মানুষজন এখানে ভিড় করছেন। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।  মৌলভীবাজার অঞ্চলে খেজুরগাছের খুব একটা দেখা মেলে না। রসের টানে ভোরের আলো ফোটার সময় অনেক মানুষ মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়িতে বাগানে আসছেন। সকাল ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে রস তোলা,বিক্রি সব শেষ হয়ে যায়। 


গাছি, ইজারাদার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আতাউর রহমান নামের এক ব্যক্তি এআরএন অ্যাগ্রো লিমিটেড মাছের খামারের মালিক। তিন বছর ধরে আতাউরের কাছ থেকে খামারটি মাছ চাষের জন্য ইজারা নিয়েছেন শেরপুরের ইউসুফ হাসান। বাজারের খেজুরের রস বাজারে যে খেজুরের রস পাওয়া যায় আর্টিফিশিয়াল মনে হয় চিনি একটু বেশি একটু বেশি মিষ্টি। ভোরবেলা অনেক মানুষ থেকে তারা খেজুরের রস বিক্রি শুরু করে। অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করেন সত্যিকারে খেজুরের রস পাওয়া যায় না বাজারের। খেজুরের রস থেকে এখানে রস অনেক পার্থক্য রয়েছে । সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় ‘গাছিদের’ গাছে হাঁড়ি বাঁধার কাজ। চলে ১১টা বেলা ৫টা পর্যন্ত। প্রতিদিন দেড় শতাধিক গাছ কেটে হাঁড়ি বাঁধা হয়।


গাছি মোহাম্মাদ করিম উদ্দিন বলেন, জনপ্রিয়তা জিনিস খাটি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে, গাছ থেকে খেজুরের রস নামাচ্ছি দেখতেছে।  এতে এর খেজুর রসের পরিচিত হয়ে গেছে। এখানে খেজুর রস কিনতে আসে প্রতিদিনই আসেই। আমরা প্রায় দেড়শ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। প্রায় ৫০টি গাছ  থেকে তিন দিন পর পর আমরা খেজুর পাল্টাই। 


গাছি আফজাল হোসেন বলেন ২০০ গাছ থেকে আমরা ১০০ গাছ থেকে লাগনো হয়,আর ১০০ গাছটি থেকে শুকান হয়। শুকান দিয়ে এইজন্যে রসটা আসবে, আর শুকানো না দিলে রস হবে। তখন আমরা সকালে ১১ টার দিকে বাটাল দার দিয়ে তখন আমরা গাছে উঠার পরে, গাছের মাটির হাঁড়ি লাগাবো। এবং নেট দিয়ে গিরে দিব, দেওয়ার পরে পরদিন সকাল ছয়টা থেকে আমরা রস সংগ্রহ করি। সাধারণ মানুষরা এই রস কিভাবে সংগ্রহ করি তা দেখে তখন রস খেজুর কিনে নিয়ে যায়।


ক্রেতারা বলেন আমি এসেছি রংপুর থেকে জেলায় খেজুরের গাছ রয়েছে ছিকরাইলে খেজুরে গাছ রয়েছে। এখানে যে খেজুরের রস পাওয়া যায় একদম পিওর একদম অরজিনাল। যে সুস্বাস্থ্য এখন পাওয়া যায় সেখানে পাওয়া যায়, এখানে প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। আমরা খেজুরের রস খেতে এসেছে আমরা এসে দেখেছি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে।  আমরা সরাসরি গাছ থেকে এখানে রস তৃপ্তি খেয়েছি এবং ভালো লেগেছে। আমরা মোট ৬ লিটার রস কিনেছি খুব ভালো লেগেছে আসলে এরকম খেজুর রস সব জায়গায় পাওয়া যায় না। হঠাৎ করে মৌলভীবাজারে আসলাম খেজুরের রস আমি এক লিটার কিনেছি।  সরাসরি গাছ থেকে খেজুরের রস ঝরে পড়ছে আমি হাত দিয়ে খেয়েছি এই হাওরের মাঝে অনেক খেজুরের গাছ রয়েছে।


খেজুরের রস খেতে আসা এক যুবক বলেন,  আসলে এটা এই খেজুর রস অরজিনাল আমরা এই গাছ থেকে গাছ থেকে হাত দিয়ে রস পড়তেছে সেটা কি সরাসরি তুই খাচ্ছি আসলে সব জায়গায় এরকম রস পাওয়া যায় না।


সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ছিকরাইলে খামার-সংশ্লিষ্ট আবু সাঈদ বলেন, এখানে প্রায় ২০০ খেজুর গাছের মতো রয়েছে, ১৮০ থেকে ১৯০ খেজুর গাছ  লাগাতেও পারি।  এখান থেকে খেজুরের রস একাদার ভাবে বের করা যায় না, কিছু শুকনা দিতে হয় রস বের করলে গাছ দুর্বল হয়ে যায়। খেজুর রসটি খারাপ হয়ে যায়।  তিন দিন শুকনা দিতে হয় তিন দিন বের করতে হয়।  ভাগ করে নেওয়া হয় ১০০ থেকে ১২০  টি গাছ তিন দিন লাগায় পরে তিন দিন এখানে থেকে ভাগ করে করে নেওয়া হয়। 


তিনি আরো বলেন আমাদের তিন মাসের প্রজেক্টটি জন্য, ততদিন এই রস সংগ্রহ করা যায় শীত চলে গেলে এই রস আর পাওয়া যায় না মাঘ মাস ও ফাগুন মাসের শেষে রস সংগ্রহ শেষ করা হয়। আমরা এটা একজন খেজুর রস অরজিনাল করা হয় কোন ভেজাল নেই। আমরা অনেকের চাহিদা পূরণ করতে পারি না আমাদের এখানে ভেজাল মুক্ত খেজুর রস পাওয়া যায় এখান থেকে আমরা আমার খেজুর গাছ থেকে গাছ থেকে রস বিক্রি করি।


সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের ছিকরাইলে ইজারাদার ইউছুফ হাসান বলেন, এটা আমাদের বারাকা গ্রুপের ফিশারির আন্ডারে খেজুর বাগানের প্রজেক্ট। এখানে পায় ২২০টি গাছ খেজুরগাছ রয়েছে। প্রতিদিন ১২০ লিটার খেজুরের রস হয়। প্রতিদিন  ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার খেজুর রস বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন হয়না মাঝেমধ্যে কাস্টমার থাকে রস বিক্রি হয়ে যায়। আর যখন রস রয়ে যায় ,এ রস দিয়ে আমরা গুড় তৈরি করি,গুড় আমরা বিক্রি করি। দূর দূরান্ত এখানে প্রায় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে খেজুর রস কিনতে। প্রায় ২২০ টা খেজুর গাছে লাগানো হয়।  ১২০ থেকে ১৩০ টা খেজুর গাছে হাঁড়ি লাগানো হয়।  প্রত্যেক হাঁড়িতে রস বের করে, কিছু কিছু হাঁড়িতে বেশি ও কম রস হয়, হাঁড়িতে দুই লিটার ও হয় আবার ১ লিটারে হয় প্রতিদিন। ১০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।  

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!