ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫
ডাক্তারের ভূয়া পদবি

চিকিৎসকের অবহেলায় সিজার শেষে রোগীর মৃত্যু

মো.ওমর সিদ্দিক রবিন, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম

চিকিৎসকের অবহেলায় সিজার শেষে রোগীর মৃত্যু

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

কিশোরগঞ্জে সিজারে অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) পৌর শহরের একরামপুর এলাকায় দি ল্যাব এইড জেনারেল হাসপাতালে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। 

অভিযুক্ত ওই চিকিৎসকের নাম ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌস। তিনি ওই হাসপাতালের গাইনী বন্ধ্যাত্ব স্ত্রী রোগের চিকিৎসক ও সার্জন। অবহেলায় মারা যাওয়া নারী’র  নাম আকলিমা আক্তার (৩২)। তিনি সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের কলাপাড়া এলাকার সবজি ব্যবসায়ী আলম হাসানের স্ত্রী।

জানা যায়, বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় সন্তান প্রসবের জন্য আকলিমা আক্তারকে দি ল্যাব এইড জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বামী ও আত্মীয়রা। এসময় রোগীকে জরুরি সিজারের কথা বলেন হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সিজারে নিয়ে যাওয়ার পর দুপুর ১টায় সেখানে সন্তানের জন্ম দেয় আকলিমা আক্তার। ততক্ষণে মৃত্যু পথযাত্রী আকলিমা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় সিজারের পর কোনভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। পেটে কাটা জায়গায় কোনভাবেই সেলাই করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত আকলিমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রোগীর আত্মীয়রা কিছু বুঝে উঠার আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে দ্রুত রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সেখানে মারা যায় আকলিমা।

নিহত আকলিমার স্বামী আলম হাসান বলেন, আমার এক আত্মীয়ের কথায় দি ল্যাব এইড হাসপাতালে স্ত্রী’র সিজার করতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের লোকজনের সাথে কথা বলি। আমার স্ত্রী’র এটি ৪র্থ সিজার ছিল। তারা বলেছে সমস্যা নাই। ডাক্তার ও হাসপাতালের লোকজনকে বলেছি তারপরও তারা কোন গুরুত্ব দেয়নি। তারা পারবে না এই বিষয়টি আমাকে বলে নাই। তাদের অবহেলার কারণে আমার স্ত্রী রক্তক্ষরণে মারা গেছে। রক্তক্ষরণ শুরু হলে তারা আমাদের না জানিয়ে নিজেরাই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে। পারে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যায়, সেখানে আমার স্ত্রী মারা যায়। আমি গরীব মানুষ সবজি’র ব্যবসা করি। এখন মনটা খারাপ তাই পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আমি এর বিচার চাই।

এই ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক হারুণ অর রশিদ বলেন, আকলিমা ভর্তি হওয়ার পর তার সকল ধরনের পরীক্ষা করানো হয়েছে। আমাদের কোন সমস্যা নাই। আমাদের সকল কাগজপত্র ঠিক আছে। ডাক্তারের কোন সমস্যা নাই। এই ডাক্তার আরও অপারেশন করেছে। অপারেশন করলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় আকলিমাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছি। সেখানে সে মারা যায়।

এদিকে তথ্য আসে চিকিৎসক ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌস নামের পাশে যে পদবি ব্যবহার করেছেন তার মধ্যে একটি তথ্য ভূয়া। একই সাথে তার সিজার করার মতো সরকারের পক্ষ থেকে সেই ডিগ্রি তিনি অর্জন করেননি।

হাসপাতালের চেম্বারে লেখা রয়েছে ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌস তিনি এমবিবিএস ডিএমইউ (আল্ট্রাসনোগ্রাম), পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্), প্রাক্তণ মেডিকেল অফিসার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। অনারারী মেডিকেল অফিসার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ।

অনারারী মেডিকেল অফিসার হিসেবে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌস কর্মরত আছেন কি না জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ হেলিশ রঞ্জন সরকার বলেন, এই নামে কোন চিকিৎসক তার এখানে কর্মরত নেই। প্রতারণা করে নাম ব্যবহার করেছেন। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিচারের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। এটি বড় ধরনের প্রতারণা। বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলবেন।

তবে তিনি মনে করেন, ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌসের সিজার না করায় ভালো ছিল। তার সিজার করা ঠিক হয়নি, উচিত না। কারণ সেই অভিজ্ঞতা ও সরকারের পক্ষ থেকে তিনি অনুমোদন প্রাপ্ত নন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডাঃ তাবাসসুম ফেরদৌসের ভিজিটিং কার্ডে দেওয়া নাম্বারে যোগাযোগ করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সিভিল সার্জন ডাঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি অফিসের কাজে ঢাকা রয়েছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আকলিমা আক্তার মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!