বগুড়ার আদমদীঘিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজের পদক্ষেপে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার মান। উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের নিয়মিত, সুষ্ঠু, উন্নত ও পদ্ধতিগত পাঠদান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। যারফলে একটি পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ইউএনও`র এমন উদ্যোগ গ্রহণে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী।
জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতরা গা-ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। পরবর্তী সরকার এ বিষয়ে চিন্তা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করার জন্য সকল জেলা ও উপজেলাতে প্রশাসনের কাছে দায়িত্বভার দেওয়া হয়। ফলে নতুন অভিভাবকের দেখা মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সারাদেশের ন্যায় বগুড়ার আদমদীঘিতে মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজসহ ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার পান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ। এরপর থেকে তাঁর নির্দেশনায় শুরু হয় শিক্ষার নতুন কার্যক্রম। চলে তাঁর নিয়মানুসারে পাঠদান।
শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার ও বিপুল হাসান জানান, আওয়ামী সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্কুল, কলেজে ঝামেলা ও বিরোধের সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে শিক্ষার গতিবিধি থেমে যায়। এভাবে কয়েকদিন চলার পর নতুন ভাবে দায়িত্বভার পান উপজেলা প্রশাসন। এরপর আবারও শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। শুধু তাই নয় আগের থেকে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষকরা। বিগত দিনে শিক্ষা কার্যক্রম এমনটা ছিলো না। হেলায় খেলায় ক্লাস নেওয়া হতো। এখন নিয়মিতভাবে যত্নসহকারে ক্লাস নিচ্ছে আমাদের। ফলে নিয়মিত ক্লাস করায় ফলে কোন প্রাইভেট বা কোচিং করার প্রয়োজন পড়ছে না। আগের সময়ে বেশিভাগ সভাপতির দায়িত্ব ছিলো স্থানীয় আওয়ামীপন্থী লোকজন। এজন্য শিক্ষকদের গুরুত্ব দিয়ে কিছু বলতো না। তারা নিয়োগ ও বিভিন্ন অর্থিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। ক্লাসের প্রতি গুরুত্ব দিতো কম। এখন পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা সহ সাংস্কৃতিক নাচ, গান শেখানো হচ্ছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি বেড়েছে।
সান্তাহার বনমালী পরমেশ্বর (বিপি) উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার ভৌমিক জানান, ইউএনও স্যারের দিকনির্দেশনায় যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সেভাবে আমি কাজ করছি। স্কুলে ছাত্রদের উপস্থিতি সংখ্যা সহ কি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে এর ফিডব্যাক সাথেসাথে ভিডিও করে দিতে হয়। এখন শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করছে। ফলে পড়াশোনার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, ৫ তারিখের পর থেকে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের নিয়মিত, সুষ্ঠু, উন্নত ও পদ্ধতিগত পাঠদান করা প্রয়োজন। কেননা একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার মূল ভিত্তি সুশিক্ষা। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে গেলে আগে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য উপজেলার সকল স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পাঠ পরিকল্পনা (রুটিং) ও মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে৷ পাঠ পরিকল্পনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, কোনদিন কি ক্লাস এবং সপ্তাহে একদিন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক গান, নাচের ট্রেনিং নিতে পারছে। সকাল ১০ টা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে তার ফিডব্যাক দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বক্ষণ মনিটরিং করছি। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার জন্য বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট ও বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার ফিডব্যাক পেয়েছি। এভাবে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আগের থেকে বেড়েছে। আগে ছিলো ৫০ পার্সেন্টের নিচে এখন ৮০ পার্সেন্ট উপস্থিতি। নিয়মিত ক্লাস হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা কোচিং বা প্রাইভেট থেকে বেশি ঝুঁকেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিছু প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে সবাই সতর্ক হয়েছেন। ফলে একটা পরিবর্তন হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রত্যাশা করছি সামনে এসএসসি এবং এইচএসসি পরিক্ষায় তারা ভালো কিছু করবে।
আপনার মতামত লিখুন :