গণঅধিকার পরিষদ নওগাঁ জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে গোলাম রাব্বানীকে। গত ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৬ মাসের জন্য অনুমোদন দিয়ে তাতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। এরপর শুরু হয় সমালোচনা আলোচনা। ক্ষোভে ফেটে পড়েন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ উঠেছে গোলাম রাব্বানী ছিলেন সুবিধা বাদী একজন ব্যক্তি। আওয়ামীলীগের সমর্থক। ছিল গভীর সম্পর্ক। ছিল সবসময় তাদের সাথে চলাফেরা। অথচ এমন একটা বিতর্কিত ব্যক্তিকে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক করা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের যোগসাজশে বিতর্কিত ওই ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে বলে নওগাঁ জেলা গণঅধিকার পরিষদ ও এর অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতার অভিযোগ। যার কারণে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, কেউবা অভিমান করে দূরে আছেন। আবার কেউবা সহ্য করে আছেন নীরবে।
জানা যায়, অভিযোগ ওঠা আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আবাদপুকুর এলাকার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে। ২০২৪ সালে মে মাসে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের চেয়ারম্যান নির্বাচনে মোটর সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করেন গোলাম রাব্বানী। সেই নির্বাচনে দুই হাজার ৭২৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান তিনি। নির্বাচনের সময় একাধিক পত্রিকায় গোলাম রাব্বানীর পক্ষে ভোট চেয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল গোলাম রাব্বানীর পরিচয় ও পারিবারিক ইতিহাস। কখনও তাকে রাণীনগর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য আবার কখনও সমর্থক পরিচয় দিয়ে নিউজ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া তুলে ধরা হয় তার ও তার পরিবারের আওয়ামীলীগের সাথে সম্পর্কের ফিরিস্তি।
নওগাঁ জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমরা শুরু থেকেই গোলাম রাব্বানীর বিপক্ষে ছিলাম। এমনকি আমাদের জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি প্রথম থেকেই রাব্বানীর ঘোর বিরোধীতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোন এক অদৃশ্য কারণে তাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। হয়তোবা লিঁয়াজো হয়েছে। একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে গণঅধিকারের কমিটিতে সর্বোচ্চ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর এই কারণে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আমরা আওয়ামীলীগকে নাকি পূণর্বাসন করছি।
একইভাবে বিরোধীতা করা হয়েছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জেলা ছাত্র, যুব ও গণঅধিকার পরিষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা। তারা আক্ষেপের সাথে মুঠোফোনে জানালেন, আমাদের আওয়ামীলীগের সময় অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। অথচ গোলাম রাব্বানী ছিল বহাল তবিয়তে। আওয়ামীলীগের সাথে তার ছিল গভীর সম্পর্ক। যা একাধিক মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। সবসময় তাদের সাথে ছিল চলাফেরা। এমনকি শেখ হাসিনা সরকার পতনের কয়েক মাস আগেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেছে। এছাড়া আমাদের কাছে তার কিছু ছবি, ব্যানার ও মোটরসাইকেল শোডাউনের প্রমান হাতে আসে। তাই কমিটিতে তাকে না রাখার জন্য নওগাঁ জেলার প্রায় সবগুলো ইউনিট থেকে গোলাম রাব্বানীর বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু পেরে উঠতে পারিনি।
তারা বলেন, গোলাম রাব্বানী ২০২২ সালের দিকে আমাদের প্রোগ্রামে দুইদিন এসেছিল। এরমধ্যে জলিল পার্কে একদিন একটা প্রোগ্রামে মারামারির সময় ব্যানার ছিড়ে চলে যায়। দুই দিন প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখন হুট করে এসে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক। অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে তাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। টাকার বিনিময়েই সে আহ্বায়ক হয়েছে।
তবে তাদের সকলের দাবি, নওগাঁ জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আলফে সানি ও গণঅধিকার পরিষদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবিরের যোগসাজশে গোলাম রাব্বানীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে সুমন কবির ভাই। তার যোগসাজশেই গোলাম রাব্বানীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কেন্দ্রের অভিভাবক নুর ও রাশেদ ভাই নওগাঁর রাজনীতি সম্পর্কে তেমন জানেনা। যদিও আমরা গোলাম রাব্বানীর সম্পর্কে কেন্দ্রে অবগত করেছিলাম, তারপরও কাজ হয়নি। আমরা মতামত দিতে পারি, কিন্তু কমিটি গঠন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির ভাইয়ের মাধ্যমে এই কমিটি হয়েছে, কাজেই সকল দায় তার। কেন্দ্র সুমন কবির ভাইয়ের উপর আস্থা রেখে কমিটি অনুমোদন করেছে। এক্ষেত্রে সুমন কবির তার পদের অপব্যবহার করছেন। আর কেন্দ্রের কাছে আমাদের মতো ত্যাগীদের চাওয়াকে মূল্যায়ন করা হয়নি এটাই আমাদের আক্ষেপ। সমর্থনতো দুরে থাক, আমরা তাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারিনি। তাই আমরা আওয়ামীলীগকে পূণর্বাসন করতে পারিনা, যারা আওয়ামীলীগ করে তাদের গণঅধিকার পরিষদে স্থান নেই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আলফে সানি মুঠোফোনে বলেন, অথনৈতিক লেনেদের মাধ্যমে তাকে করা হয়েছে এই বিষয়টি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। গোলাম রাব্বানীর আগে থেকেই কেন্দ্রের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তৃনমূলের সাথে সম্পর্ক তেমন ভালো ছিলনা। পরে সম্পর্কের উন্নতি হলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে তাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। আর সে আওয়ামীলীগের কোন পদে ছিলনা। তবে কারো সাথে সম্পর্ক থাকতেই পারে বা সমর্থক হতেই পারে বলে সাফাই গাইলেন তিনি।
জানতে চাইলে একইভাবে গোলাম রাব্বানীর পক্ষে সাফাই গেয়ে জবাব দিলেন গণঅধিকার পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির। তিনি মুঠোফোনে বলেন, একটা গ্রুপ যেটা চেয়েছিল, সেটাই করেছি। যারা হতে পারেনি, তারা এসব অভিযোগ করছে। আর আমি একজন ডোনার, অথচ আমাকে নিয়ে অর্থনৈতিক লেনদেন এটা অযৌক্তিক। তবে গোলাম রাব্বানী আওয়ামীলীগের কোনো পদে থাকলে, বা কাউকে হুমকি দিলে বা মারধর করে থাকলে আমি বিষয়টি দেখব। আর আওয়ামীলীগের কারো সাথে ছবি থাকতেই পারে, এটা কোনো বিষয় না। গোলাম রাব্বানী নির্বাচন করার পর কিভাবে স্থান পায় এমন বিষয়ে জানতে চাইলে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয় বলে এড়িয়ে যান তিনি। এছাড়া ঝিনাইদহের হলেও নওগাঁয় তিন বার এসে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়কের পদ পাওয়া গোলাম রাব্বানী মুঠোফোনে বলেন, আমি আওয়ামীলীগের কোনো পদে ছিলাম না, কোনোদিন আওয়ামীলীগ করিনি। তাই কখনও নৌকা চাইনি। আর পোস্টারগুলো ভুয়া, এডিট করা। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছি, সেটা ভিপি নুর জানেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর সাথে ছবি থাকতেই পারে। এছাড়া সেসময় ব্যবসা করার জন্য আমাকে আওয়ামীলীগের সাথে মিশে থাকতে হয়েছে। ছাত্রশিবিরের অনেকেই ছাত্রলীগের সাথে মিশে ছিল। আর আমি ২০২১ সালের পর থেকে গণ অধিকার পরিষদের সাথে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলিল পার্কে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছিল। নিউজে আওয়ামীলীগের সদস্য বা সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল এমন প্রশ্নে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান। আর টাকা দিয়ে পদ নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার দাবি গোলাম রাব্বানী আওয়ামীলীগের সমর্থক ছিল এবং তার চলাফেরায় কেউ কেউ মনে করতেন সে আওয়ামীলীগের সাথে গভীরভাবে জড়িত এবং সদস্য।
আপনার মতামত লিখুন :