মৃত্যুর ৩ বছর ৭ মাস পর কবরে মিললো অক্ষত মরদেহ। কাফনের কাপড়টুকুতেও লাগেনি সামান্য দাগ। চারপাশে চিকচিক করছিল বালু। এ ঘটনাটি ঘটেছে কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেচঁরী গ্রামে।বিরল এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে বটতলা- জমাদ্দার হাট আঞ্চলিক সড়কের পাশেই পারিবারিক গোরস্থানে ঘটে এ ঘটনা।
মৃত্যু ব্যাক্তির বাড়ী রক্ষণাবেক্ষণ কারী ব্যাক্তি মো. আনোয়ার হোসেন দেখতে পেলেন তার কবরের পায়ের অংশের মাটি ভেংগে পরেছে, তাই তিনি নিজ উদ্যোগে তা মেরামত করতে গেলে কবর খুড়তেই ঘটে আশ্চর্যজনক ঘটনা। দেখা গেল, অক্ষত অবস্থায় ধবধবে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে লাশ।
স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালে সেখানে কবরস্থ করা হয়েছিল মরহুম মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (শাহ জালাল) মুন্সিকে। ৩ বছর ৭ মাস আগের সেই পুরোনো কবরটি মেরামত করতে গিয়ে এ ঘটনায় অবাক তারা। দ্বিতীয়বার স্বচোক্ষে মরহুম মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (শাহ জালাল) মুন্সিকে অবিকল দেখতে পারায় অবাক মরহুমের স্বজনসহ পুরো গ্রামবাসী।
জানা গেছে, ৫৫ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান মরহুম মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (শাহ জালাল) মুন্সি। তিনি পেশায় ছিলেন উত্তর চেচঁরী দাখিল মাদরাসার সহ-সুপার ও কাঠালিয়া খান বাড়ী মসজিদের ইমাম। তিনি স্ত্রী ও ১ ছেলে ১ মেয়ে রেখে গেছেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভিড় জমান আশপাশের এলাকার মানুষও। তারা জানান, পরহেজগার মানুষ ছিলেন মাওলানা মাছুম বিল্লাহ। এলাকার সব থেকে জনহিতকর মানুষ হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। তিনি ছিলেন ছারছীনা দরবারের একজন খাটি মুরিদ।
মরহুমের ছেলে মো. আল আমিন মুন্সি জানালেন, তার বাবার শরীরের কোথাও কোনো পচন ধরেনি। এমনকি কাফনের কাপড়ও নষ্ট হয়নি। তাকে কোনো কিছুই স্পর্শ করেনি। যেভাবে তাকে কিবলামুখী করে রেখেছিলাম সেভাবেই কবরে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ এটা আল্লাহর বান্দার প্রতি তার রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়।
মরহুমের চাচাত ভাই মাওলানা মুফতি শরীফ ছানাউল্লাহ জানান, ৩ বছর ৭ মাস আগে আমরা তাকে কবরস্থ করার সময় যেভাবে দাফন করেছিলাম। সেদিন ওই অবস্থায় তার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য লাশের হাত-পায়ের সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি।
উত্তর তালগাছীয়া নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক ও কাঠালিয়া বন্দর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়, যারা দুনিয়াতে সবকিছু ভুলে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলেন তাদেরকে কবরে সুসংবাদ দেওয়া হয়। কবর পোকা-মাকড়ের ঘর হলেও তাদের কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। শুধু তাই নয় ইসলামের পথে থাকা ওইসব ব্যক্তির দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিজের।
মরহুমের চাচা মো. ফারুক হোসেন মুন্সি বলেন, আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কার হিসেবে এটা দিয়েছেন। কারণ এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন যারা আল্লাহর হয়ে যান, আল্লাহ তার হয়ে যান। এ ধরণের মানুষকে কবরে কোন কিছু স্পর্শ করবে না এবং কবরেও তার রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহই করেন।
কাঁঠালিয়া সদর ফাজিল মাদরাসার অধ্যাক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় কোনো বান্দাকে কোনো অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে সম্মানিত করতে পারেন। সেটি হতে পারে যুগের পর যুগ লাশ অক্ষত রাখার মাধ্যমেও। অতএব হতে পারে যে এটি একটি কারামত কিংবা আল্লাহর কুদরতের একটি অংশ। অতএব, যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় ঈমান ও নেক আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তার লাশ যদি দীর্ঘদিন পরও আমরা অক্ষত দেখতে পাই সেক্ষেত্রে তাঁর প্রতি আমরা সুধারণা করতে পারি।
ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুনিয়ায় যারা আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলেন তাদের হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহই নিয়ে থাকেন। তাদেরকে কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। ওই ব্যক্তির বেলায়ও হয়েছে তাই।
আপনার মতামত লিখুন :