পিরোজপুর জেলা সদরে ও কাউখালী উপজেলায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর মসজিদ দুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ পায় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রো গ্লোব, মেসার্স খান বিল্ডার্স, রাজ এন্ড ব্রাদার্স। নিয়ম অনুযায়ী কাজ পরিদর্শনের জন্য সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন করে ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা। কিন্তু সেখানে তদারকির জন্য কোনো ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিজেদের ইচ্ছামত নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করছেন।
দুটি মসজিদেই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদ নির্মাণের শুরুতে ৮০ ফুট পাইল কাস্টিন করে স্থাপন করার নিয়ম থাকলেও সেখানে ৫৫ ফুটের পাইল কাস্টিন করেই ড্রাইভিং শুরু করেছে। অথচ নিয়ম বলছে সকল পাইল কাস্টিং শেষ করে ড্রাইভিং শুরু করার। এছাড়াও ঢালাইয়ের জন্য নিম্নমানের রড ও ইট বালু ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা ঠিকাদারের কথায় এমন কাজ করছেন বলে জানান।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রকল্পের মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের কোনো প্রকার সাইনবোর্ড না টাঙিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে ভিতরে বসে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি প্রতিবাদ জানিয়ে মসজিদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এর কিছুদিন পরে আত্মগোপনে থাকা ঠিকাদার সাবেক পৌর মেয়র মালেক নামসর্বস্ব ২ জন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ম্যানেজ করে পুনরায় কাজ শুরু করে। যা নিয়ে এলাকায় পূণরায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে জানতে মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্সের ঠিকাদার সাবেক পৌর মেয়র আত্নগোপনে থাকা হাবিবুর রহমান মালেকের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স এর প্রোপাইটর নাসির খান জানান, আমরা তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদ দুটি নির্মাণের কাজ পাই। এর মধ্যে একজন ছিলেন পিরোজপুরের তৎকালীন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তখন তার প্রভাবে ইলেক্ট্রো গ্লোব ও মেসার্স খান বিল্ডার্স কাজ না করে সাবেক পৌর মেয়রের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাজ এন্ড ব্রাদার্সকে কাজ করার অনুমতি দেই। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পরে তৎকালীন পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক কাজটি অন্য লোকজনের কাছে বিক্রি করে আত্মগোপনে চলে যান। এখন তারা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে যদি কাজ করে তার দায়ভার আমরা নেবো না। কাজ খারাপ হলে সেটা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দেখা উচিত।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ মন্ডলের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, কাজের ক্রুটি ধরার আপনারা কে? এটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেখবে।
পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ খাইরুজ্জামান এর বক্তব্য জানতে তার অফিসে একাধিকবার গেলেও অফিস চলাকালীন সময়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি ঢাকা থেকে গেস্ট আসছে জানিয়ে মুঠোফোনে বলেন, প্রতিটি প্রকল্প দেখভালের জন্য একজন করে ইঞ্জিনিয়ার থাকার কথা, হয়তো আপনারা পাননি। পরে কাউখালী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পেও কোনো ইঞ্জিনিয়ার না থাকার বিষয়টি তাকে জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে রিপোর্ট করে দেয়ার কথা বলেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে বিষয়টি যেহেতু শুনেছি তদন্ত করে দেখবো। তদন্তে অনিয়মের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :