ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত  হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী হারমোনি উৎসব

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৩:৪৯ পিএম

শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত  হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী হারমোনি উৎসব

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, তাদের ব্যবহৃত পণ্য প্রদর্শন ও বিপননের লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী হারমোনি ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে একত্রে শ্রীমঙ্গলের ২৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ব্যবহার্য পোশাক, পণ্য ও খাদ্যাভাস তুলে ধরবে। এই মুহূর্তে চলছে তার প্রস্তুতি।

মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর বসবাস। এই নৃ জাতিগোষ্ঠীর প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, কালচার ও ভাষা। সময়ের

আবর্তে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে এই এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর হওয়ায় প্রতিনিয়ত সমাগম ঘটে ভ্রমণপিপাসুদের। এই ভ্রমণপিপাসুদের সঙ্গে বৈচিত্র্যময় এই জাতিগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‍‍` হারমোনি উৎসব‍‍`। আগামী ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এ উৎসব।

এই মুহূর্তে চলছে প্রস্তুতি । শুধু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নয়, এসব নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যবহার্য পোশাক, বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যসামগ্রীর সমন্বয়ে বসবে মেলা। খাসিয়া কমিউনিটির নেতা ও শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া খানিপুঞ্জির হেডম্যান ফিলাপত্মী জানান, উৎসবে শ্রীমঙ্গল উপজেলার খাসিয়া জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিশেষ করে খাসিয়াদের আচার অনুষ্ঠান, পোশাক, উৎপাদিত পণ্য, ব্যবহার্য সামগ্রী প্রদর্শন ও বিপননের প্রস্তুতি নিয়েছেন। উৎসবে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান হবে।

চা-শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বারাইক জানান, উৎসবে অংশ নেয়া ২৬টি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চা- জনগোষ্ঠীরই ১৯টি জাতি। এই ১৯ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাড়াইকরা করবে ঝুমুর নৃত্যু, অনেকে এটিকে চানৃত্য বলে। সবর জনগোষ্ঠী পরিবেশন করবে পত্র সওরা নৃত্য ও চড়ইয়া নৃত্য, খাড়িয়ারা পরিবেশন করবে খাড়ি নৃত্য, রিকিয়াসনরা করবে লাঠি নৃত্য, রাজভলবরা করবে উড়িয়া নৃত্য, কন্দরা করবে কুই নৃত্য।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর নেতা জনক দেব বর্মা জানান, এ উৎসবে তাদের ঐতিহ্যবাহী কাথারক নৃত্য, বেসু নৃত্য, জুম নৃত্য, গ্যারি পুজা, ক্যার পুজা, নক থাপেংমা পূজা ও কাদং (বনপা) পরিবেশনসহ প্রদর্শিত হবে তাদের লাইভ তাঁত।

গারো জনগোষ্ঠীর নেতা পার্থ হাজং জানান, উৎসবে গারো জনগোষ্ঠীর জুম নৃত্য, আমোয়দেব (পুজা), গ্রীক্কা নাচ (মলুয়যুদ্ধ), চাওয়ারী সিক্কা (জামাই-বৌ নির্বাচন), চাম্বিল নাচ (বানর নৃত্যু), মান্দি নাচ, রে রে গান, সেরেনজিং (প্রেমকাহিনীর গান) সহ আরো বেশ কিছু আয়োজন থাকবে।

উৎসবে আরো আকর্ষণ হলো মণিপুরী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী রাসলীলার নৃত্য, পুং চলোম নৃত্য ( মৃদঙ্গ নৃত্যু) ও রাধাকৃষ্ণ নৃত্য।

এ ব্যাপারে মনিপুরি নৃত্য প্রশিক্ষক কেয়া সিংহা জানান, উৎসবের জন্য মণিপুরী ঐতিহ্যের অনুষ্ঠানগুলোর মহড়া চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, এই উৎসবের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পর্যটক বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে-রুমও বুকিং করেছেন।

জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। যাদের আছে নিজস্ব ভাষা ও আচার অনুষ্ঠান। হারমোনি উৎসবে এক মঞ্চে এগুলো তুলে ধরা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!