ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫

কৃষি জমি থেকে অবাদে মাটি বিক্রির উৎসব: প্রশাসনের নীরব ভূমিকা

মনজু বিজয় চৌধুরী, মৌলভীবাজার

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

কৃষি জমি থেকে অবাদে মাটি বিক্রির উৎসব: প্রশাসনের নীরব ভূমিকা

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

মৌলভীবাজারে প্রশাসনে নীরবতার সুজুগে অবাদে চলছে কৃষিরজমির মাটি বিক্রি। উর্ব্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। প্রশাসনিক ভাবে নেওয়া হচ্ছেনা কোন কার্যকারী পদক্ষেপ। বরং অনেক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ মাটি বিক্রির অনুমতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইট ভাটা, বাড়ি নির্মান, গর্ত ভরাট এই সমস্ত কাজে। মাটি বহনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর সহ ভারী ট্রাক। আর এই সমস্ত ভারী গাড়ি চলতে গিয়ে গ্রামগঞ্জের কাঁচা পাঁকা রাস্তা গুলো ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। কিছু দালাল সুকৌশলে ফসলি জমির মালিককে প্রলোভন দিয়ে মাটি বিক্রতে উৎসাহী করছে। কেটে নিয়ে যাওয় ফসলি জমিগুলোর উর্বরতা না থাকায় আবাদ হয় না। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে,অপর দিকে দিনদিন পরিবেশের মধ্যে পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়ন, সাতগাও কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট, শম্যারকোনা, রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর, আশ্রাকপন, চৌধুরীবাজার, মহলাল, বালিসহস্র সহ সারা জেলার অসংখ্য স্থানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে আবাদি জমির মাটি। কৃষি বিভাগের ভাষায় যাকে টপ সয়েল (মাটির  উপরের উর্বরা অংশ) বলে। জমির মালিকরা সামান্য টাকার লোভে ইটভাটা ব্যবসায়ীদের খপ্পড়ে পরে ফসলি জমির এ টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আবাদযোগ্য জমির উর্ব্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। ভাটার ইট তৈরী, রাস্থা নির্মাণ, বসতভিটা উচু করা সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে এই মাটি ব্যব‎হৃত হচ্ছে। প্রতি বছর ডিসেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই তিন মাস ইটভাটার ব্যবসায়ীরা দালালের মাধ্যামে সহজ সরল কৃষক ও জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে আবাদি জমির মাঠি ক্রয় করেন। জমির মালিকরা এর কুফল বিবেচনা না করে স্বল্প দামে আবাদি জমির এ ‘টপ সয়েল’ বা শীর্ষ মাটি বিক্রি করে যাচ্ছেন। 
জানা যায় এ বছর রাজনগরে ভয়াবহ বন্যার কারণে কৃষকরা আমন ধান আবাদ না করতে পারায় অভাবের কারনে ফসলি জমির মাটি বিক্রি অনেকটা বেড়ে গেছে।
এলাকায় অসংখ্য ইটভাটা থাকায় প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকের লোকজন অতি কৌশলে জমির মালিকদের লোভ দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করে। ড্রেজার মেশিন ও ট্রাক দিয়ে জমি গভীর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। স্থানীয় হিসাবে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটির দাম দুরত্ব, অবস্থান ও প্রকার ভেদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার দুরত্ব অনুযায়ী পরিবহন খরচের ওপর মাটির দাম কম-বেশী হয় বলে বেশ কয়েক জন মাটি ব্যবসায়ী জানান।
মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে মাটি কিনে প্রতি হাজার ঘনফুট মাটিতে ৩শ থেকে ৪শ টাকার লাভে জেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিক এবং রাস্থা নির্মানকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের কাছে বিক্রি করছে। এর মধ্যে ইট পোড়ানোর উপযোগী মাটির মূল্য বেশী। কৃষি ফসলের মাঠের ক্ষতি সাধন সহ কৃষি ক্ষেত্রে এসব অপতৎপরতা প্রতিরোধ করতে কৃষি বিভাগ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ বরাবরই নিরব ভূমিকা পালন করছে।
জমির মলিকদের ধারনা সাময়িক ভাবে জমির কিছু ক্ষতি হলেও বিভিন্ন ধরণের সার দিলে উর্বরা শক্তি স্বাভাবিক থাকে। 
বাংলাদেশ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন’র (বাপা) জাতীয় পরিষদ’র সদস্য আ.স.ম সালেহ সোহেল বলেন,  বলেন, প্রতি বছর টপ সয়েল বিক্রি বা অপসারনের কারনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, এবং পার্শ্ববর্তী আবাদি জমির চরম ক্ষতি হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও গাছপালার ভীত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্থাঘাট। ধূলাবালিতে সয়লাভ মানুষের বসতবাড়ি। নেতিবাচক এসব কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 
মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমির মাটি বিক্রির সময় মোবাইল ফোনে অবগত করলে পরে দেখবেন বলেন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করার অপরাধে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালানা করে থাকি। আমরা এক লাখ পর্যন্ত জরিমানা পর্যন্ত করেছি। এখন আপনার বলেন আমরা কি করতে পারি।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!