লালমনিরহাট কালীগঞ্জে দিন দিন বেড়ে চলেছে খড়ের দাম। এমন দামে কৃষকরা খুশি হলেও বিপাকে পড়েছে খামারি। চলতি মৌসুমে কৃষকরা ধান কেটে গোলায় তোলার পর অবশিষ্ট ধান ও খড় বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন ।
এক আটি (খড়) বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪থেকে ৫টাকায় । ১ হাজার আটি (খড়) বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও বিপাকে পড়েছে খামারিরা। এর আগে ভরা মৌসুমে খড়ের বাজার এমন লাগামহীন হয়নি বলে দাবি খামারিদের।
খামারিরা বলছেন, ভরা মৌসুমে যে আটির দাম ছিলো ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত, এখন সেই আটি কিনতে হচ্ছে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিন পর আবার দাম বৃদ্ধি পাবে বেশি মূল্য দিয়ে শুধু খড় নয়, দানাদার খাদ্য কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেকে আবার একটু দাম কম পাওয়ার আশায় কৃষি জমির মালিককে অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখছেন।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, গুড়া-ভুষির পাশাপাশি ধানের খড় গরুর জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য। গুড়া-ভুষির সঙ্গে খড় কেটে ভিজিয়ে রেখে গরুকে খাওয়ানো হয়। গরুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য এ খাদ্যের বিকল্প নেই। তাই খামারে অথবা ব্যক্তিগতভাবে গরু পালনকারীদের সারাবছরের জন্য খড়ের প্রয়োজন রয়েছে।
লালমনিরহাট কালীগঞ্জে কৃষাণী সেফালী বেগম (৩০) বলেন, আমার গোয়ালে ৫টি বড় গরু ও একটি বাছুর রয়েছে। প্রতিটি গরুর জন্য বর্তমানে প্রতিদিন অনেক টাকার খড়সহ খাদ্যতে ব্যয় হয় । এত খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
এখন গরু রাখতেও পারছি না, আবার বিক্রিও করতে পারছি না। কাঁচা ঘাস নেই আর খড়ের দামও বেশি।
তিনি বলেন, খড়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় অনেকেই আবার দানাদার জাতীয় গোখাদ্যের দিকে ঝুঁকছেন। ভুষি ও চালের গুঁড়াসহ বিভিন্ন দানাদার গোখাদ্যের দামও লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি কেজি দানাদার গোখাদ্যের দাম পড়ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।
লালমনিরহাট কালীগঞ্জে তিস্তা পাড়ের কৃষক মনিরুল ইসলাম (৩০) বলেন, গত দুই তিন মৌসুম থেকে খড়ের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে ছোট-বড় সব ধরনের খামারে। এর ফলে মাংস ও দুধ উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তিনি আরো বলেন, আগে ধান মাড়াইয়ের জন্য কোনো যন্ত্র ছিল না। বর্তমানে ধান মাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খড়ের অভাব দেখা দিয়েছে। কারণ, মেশিনে ধান মাড়াই করলে অধিকাংশ খড় নষ্ট হয়ে যায়। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার অনেকাংশেই এ সংকটের জন্য দায়ী।
আজ দুহুলী বাজারে গেলে কথা হয় খড় কিনতে আসা আসাদ মিয়া (৪২) সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার খামারে ৭টি গরু আছে। তাছাড়াও আমরা ৪ জন মিলে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খড় কিনে এ বাজারে এনে বিক্রি করি। এ কাজে আরও কয়েকজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে আমাদের। আগে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে খড় বিক্রি হতো।
এখন মৌসুম চলছে তাই আগের তুলনায় একটু কমই বিক্রি হচ্ছে। মূলত আমরা গ্রাম থেকে ভরা মৌসুমে ১টি আটি (খড়) ২টাকা দিয়ে কিনেছি। সেগুলো আবার কিছুদিন পর বাজারে এনে বহন খরচসহ সব মিলিয়ে একটি আটি বিক্রি করি ৪-৫ টাকায়। এতে মোটামুটি ভালোই লাভ হয়।
চলবলা ইউনিয়নের কৃষক খোকন মিয়া (৩৫) বলেন, ধানের পাশাপাশি বর্তমানে বাজারে খড়ের চাহিদাও প্রচুর। আমার ৩ বিঘা জমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ধানের আটি (খড়) পেয়েছি যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১২ হাজার ৪০০শ টাকারও বেশি। আটি ভালো দাম হাওয়ায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফেরদৌসুর রহমান বলেন, দিন দিন খড়ের দাম বেড়ে চলায় কৃষকেরা লাভবান হলেও গরুর খামারিরা পড়েছেন বিপাকে। সেজন্য খামারিরা শুধু খড়ের ওপর নির্ভর না করে উন্নত মানের ঘাস চাষ করলে গোখাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :