শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত জেলা নওগাঁ। সকল সবজি উৎপাদনে এজেলার সুখ্যাতি আছে দেশ জুড়ে। শীত মৌসুবে উৎপাদন হয় নানা রকমের সবজি। আর শীতের বাহারি সব সবজির ভিড়ে ফুলকপির কদর যে আলাদা, তা নিয়ে তর্ক করার লোক খুব একটা পাওয়া যাবে না। তবে সেই ফুলকপি ভালো লাভের আশায় চাষ করে এখন বিপাকে নওগাঁর কৃষকরা। ভালো ফলনেও কপাল পুড়ছে তাদের। পাইকারি প্রতি পিচ ফুলকপি সর্বনিম্ন আট আনা সর্বোচ্চ ২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ডাক্তারের মোড়ে গিয়ে দেখা যায় ভোর থেকেই কৃষকরা তাদের জমিতে চাষ করা ফুলকপি বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। কিন্তু ফুলকপি বিক্রি করতে এসেই পড়তে হচ্ছে বিপাকে। প্রতি পিচ ফুলকপির দাম পড়ছে সর্বনিম্ন আটা আনা। এরপরও কেউ কেউ অপেক্ষা করেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।
কৃষকরা বলছেন, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পেয়েছেন তারা। সে বিষয়টি ভাবনায় রেখে এ বছরও আবাদ করেছেন তারা। তবে ফুলকপির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে থাকল, আসলও উঠে আসছে না। সবজির দামে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে চিন্তায় আছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতীয় এ সবজির উৎপাদন কম থাকায় দাম ছিল বেশ চড়া। বর্তমানে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে এমন ধ্বস নেমেছে বলে মনে করছেন তারা।
ফুলকপি বিক্রি করতে আসা আকবর হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখনই ফুলকপি ১ থেকে টাকা ২ টাকা পিচ বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও কপি কেনার মত মানুষ নেই। এক বিঘা জমির কপি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। তাহলে আমরা কি করে চলবো। ধার-দেনা করে ফুলকপি চাষ করেছি। এখন সেই টাকাই তো পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’
এনামুল হক নামে আরেক ফুলকপি বিক্রেতা বলেন, ‘এক বিঘা জমির ফুলকপি চাষ করেছি। প্রতি কপির গাছে ৬ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে আট আনা, এক টাকা ও দেড় টাকা করে। বিক্রি করে ভ্যান খরচের টাকায় উঠবে না। এমন বাজার দেখে কলিজা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনো জমিতে যে ফুলকপি আছে সেগুলো গরুকে দিয়ে খাওযায়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬ হাজার ২০০ টন ফুলকপি উৎপাদনের সম্ভবনা।
জানতে চাইলে বাজারে চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হয়েছে উল্লেখ করে সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, দামের বিষয়টি কৃষি বিপণন কর্মকর্তা দেখেন।
নওগাঁ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার মুঠোফোনে বলেন, চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হয়ে গেছে। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। কিনতে চাচ্ছেনা ভোক্তারা। তাই দাম কম পাচ্ছে কৃষকরা। তারপরও আমরা স্বপ্ন’র মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করার চেষ্টা করছি। একবার ৫টাকা দরে কিনেছিল, এখন আর তারাও কিনতে চাচ্ছেনা।
আপনার মতামত লিখুন :