নওগাঁর রাণীনগরে আগামী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল এলাকাসহ শতবছরের ঐতিহ্য রক্তদহ বিল ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমেনা শারমীনের পরিকল্পনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
যান্ত্রিক এই জীবনে গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু সুস্থ্য বিনোদন যোগাতে গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্র। রক্তদহ বিল ও তার সংযোগখাল রতনডারাসহ আশেপাশের এলাকাকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলার মধ্যে সরকারিভাবে এটিই প্রথম পর্যটন এলাকা, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে উদ্বোধন করা হচ্ছে। শেষ সময়ে ওই এলাকাজুড়ে চলছে সাজানো-গোছানো আর শিল্পীর হাতের হরেক রঙের কারুকার্য আঁকানোর কাজ।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, আগামী মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে পর্যটন এলাকা, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন উপলক্ষে এদিন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে এক ভিন্নধর্মী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতবছরের ঐতিহ্য রক্তদহ বিল থেকে সবুজ মাঠের বুক চিরে একটি খাল রতনডারা বেরিয়ে এসেছে। খালের দু’পাড় দিয়ে রয়েছে সবুজ গাছ। রতনডারা ব্রিজের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে নামফলক যুক্ত একটি নান্দনিক গেইট। গেইটের মুখেই শোভা পাচ্ছে শিল্পীর আঁকা পুরো খালের রঙ্গিন ছবি। নিচেই পর্যটকদের বরণ করে নিতে ইট, সিমেন্ট আর বালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশাল আকৃতির মাছ। আর সেই বিশাল মাছের শরীরে হরেক রঙে লেখা শোভা পাচ্ছে মৎস্য অভয়াশ্রম। রতনডারা খালের পশ্চিমপাড় দিয়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বসার জন্য চমৎকার অনেকগুলো সিট। এছাড়া পর্যটকরা যেন নিরাপদে সহজেই চলাচল করতে পারেন সেই জন্য পুরো রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছে। এছাড়া সুন্দর সময়কে যেন পর্যটকরা ছবি তোলার মাধ্যমে স্মৃতির পাতায় রেখে দিতে পারেন তার জন্য তৈরি করা হয়েছে নানা রকমের স্থাপনা। এযেন শিল্পীর আঁকা অসাধারণ সুন্দর সবুজ মাঠ আর খালের মিলনমেলার একটি ক্যানভাস।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন বলেন, রাণীনগর একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা। কিন্তু উপজেলায় পর্যটনমুখী কোন খাত গড়ে তোলা হয়নি। উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্য হচ্ছে রক্তদহ বিল। যে বিলে সারা বছরই হরেক রকমের পাখির যাওয়া-আসা রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে পাখিরা এখানে আবাসস্থল গড়ে তুলতে পারে না। এছাড়া রাণীনগর-কালীগঞ্জ সড়কটি নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় হাতিরপুল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষন করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের এই অঞ্চলটি যখন পানিতে টই টুম্বর হয়ে যায় তখন এলাকাটি আরও আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে। এ সময় নৌকা নিয়ে ভ্রমণের জন্য হাজারো পর্যটকরা এখানে ভীড় করে। আর হরেক রকমের পাখিদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো রক্তদহ বিল এলাকা।
তিনি আরও বলেন, তাই হাতিরপুল ব্রিজ থেকে রতনডারা খালের পাশ দিয়ে রক্তদহ বিলের মধ্যে চলাচলকারী মেঠো সড়কটি আধুনিকায়ন, সড়কের দুই পাশে পর্যটকদের জন্য বসার ব্রেঞ্চ নির্মাণসহ আরো নানা রকমের সৌখিন ও আকর্ষনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা এবং সারা বছর রক্তদহ বিলে আশ্রয় নেওয়া হরেক রকমের পাখিদের অভয়ারন্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাখি পল্লী হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করি। পাখিরা যেন নিরাপদে বসবাস ও প্রজনন করতে পারে সেইজন্যে সড়ক ও বিলের পাশ দিয়ে থাকা গাছগুলোতে পাখির বাসা হিসেবে মাটির হাড়িও স্থাপন করাসহ পুরো প্রকল্পের কথা জেলা প্রশাসক স্যারকে জানালে স্যারের সার্বিক সহযোগিতায় “রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী” শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করি। শেষ পর্যন্ত সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারায় এবং উপজেলাবাসীর জন্য নতুন কিছু রেখে যেতে পারায় আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত। সরকারের পাশাপাশি এলাকাটির সৌন্দর্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ধরে রাখার দায়িত্ব স্থানীয়সহ পুরো উপজেলাবাসীর। আমি আশাবাদী এক সময় এলাকাটির নাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :