ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

যুবলীগ ক্যাডার ত্যাড়া লিটনের ইটভাটা গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২৫, ০২:১৫ পিএম

যুবলীগ ক্যাডার ত্যাড়া লিটনের ইটভাটা গিলছে স্কুল, বসতি ও ফসলি জমি

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। করছেন না আইনের তোয়াক্কাও। শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনীমুড়া গ্রামে ফসলি জমি, আবাসিক এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে মেসার্স লিটন ব্রিকস। ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে কয়লা, এতে শুধু পরিবেশই বিষাক্ত হচ্ছে না, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ আশেপাশের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যুবলীগ ক্যাডার মেজবাউল ইসলাম লিটনের এ অবৈধ ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। 

এছাড়া, ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত পিকআপ, ট্রলি, ড্রাম ট্রাকের চাপায় বিনষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ফাটল ধরেছে মৃগী নদীর উপর নির্মিত আশেপাশের দশ গ্রামের চলাচলের একমাত্র সেতুটিও। ভাটার ধুলার কারণে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। দ্রুত অভিযান চালিয়ে ইটভাটাটি পুরোপুরি বন্ধের দাবি জানিয়ে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। আইনের সঠিক প্রয়োগের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসীরা ইতোমধ্যে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগিনীমুড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও যোগিনীমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে এ অবৈধ ইটভাটাটি। যার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ ভাটার অন্যপাশেই বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও। জেলা যুবলীগের সদস্য মেজবাউল ইসলাম লিটন এলাকায় ত্যাড়া লিটন নামে পরিচিত।

যোগিনী মুড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, গ্রামের একমাত্র রাস্তাটি সরু হওয়ায় ইটভাটার মাটি ও ইট বহনকরা ট্রাক, ট্রলিতে প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার হয় তারা। এছাড়াও ইটভাটার মাটির ধুলো, কয়লার ধুলো এবং ঝাঁঝালো গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ইট পোড়ানোর ঝাঁঝালো গন্ধে মাথা ব্যথায় ক্লাস ঠিকভাবে করা যায় না প্রচুর ধুলোবালি থেকে অসুস্থ হচ্ছে অনেকেই।

স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে ইটভাটার মালিক যুবলীগ ক্যাডার মেজবাউল ইসলাম লিটন ওরফে ত্যাড়া লিটন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়দের আপত্তির মুখেও ইটভাটাটি স্থাপন করেন। তৎকালীন পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল নোমান ও মোহাম্মদ মাহমুদ  ইটভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার মৌখিক নির্দেশনা দেন। কিন্তু জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান ও সাবেক এমপি ছানুর দাপট দেখিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চালিয়ে আসেন ইটভাটাটি। ৫ আগস্টের পরও বৈশম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার দায়ে পলাতক রুমানের খালাতো ভাই পরিচয় দেওয়া লিটন দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটাটি। গুঞ্জন উঠেছে, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ম্যানেজ করেই গ্রামবাসীর আপত্তিতেও তিনি আইন অমান্য করে ভাটাটি চালাচ্ছেন।

এলাকাবাসী আরও জানায়, ইটভাটা তৈরির পূর্বে মানা হয়নি কোনো আইন। এক কিলোমিটারের মধ্যে ফসিহ উল উলুম দাখিল মাদ্রাসা, যোগিনীমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যোগিনী মুড়া উচ্চ বিদ্যালয়, মোবারকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানকায়ে সিদ্দিকীয়া দরবারসহ তিনটি নূরানী ও হাফেজীয়া মাদ্রাসা। এছাড়াও এক কিলোমিটারের মধ্যে মসজিদে মামা শরিফা, যোগিনীমুড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ, যোগিনীমুড়া নামাপাড়া জামে মসজিদ, মোবারকপুর নয়াপাড়া জামে মসজিদ, মোবারকপুর নতুন জামে মসজিদ।

স্থানীয় সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আশপাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও বসতঘরের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও কালো ধোঁয়ায় মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাটার ট্রাক, ট্রলির কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে গাছপালা বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। গাছে ফলমূল ধরা কমে গেছে। স্থানীয় লোকজন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হাসিনার দোসর যুবলীগ ক্যাডার ত্যাড়া লিটন নতুন বাংলাদেশেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইটভাটা চালাচ্ছে।
স্থানীয় যুবক সেলিম মিয়া বলেন, পরিবেশ ধ্বংসকারী ত্যাড়া লিটন আমাদের বুকের ওপর আমাদেরকে মৃত্যুর মুখে ফেলে ভাটা পরিচালনা করছে। কিন্তু প্রশাসন নিরব। ছাত্রজনতার আন্দোলন ঠেকাতে যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অন্যতম ডোনার খ্যাত এই ত্যাড়া লিটন। স্বাধীন দেশে যদি এখন দাপিয়ে অন্যায় করে তবে সাধারণ ছাত্রজনতা তা মেনে নিবে না। দ্রুত এ ভাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি অন্যথায় গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দিবো।

আরেক তরুণ সোলাইমান কবির বলেন, জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। খুনি হাসিনার দলের ডোনার এই ত্যাড়া লিটনের সাথে আঁতাত করে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা, এবং জনগণের স্বার্থ বিরোধী কিছু করলে, ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো সেইসব লোকদেরকেও জনগণ প্রতিহত করা হবে। কারণ এদেশের জনসাধারণ প্রতিবাদ করতে জানে।

এ বিষয়ে ভাটার মালিক জেলা যুবলীগের সদস্য মেজবাউল ইসলাম লিটন জানান, সবাই যেভাবে ভাটা পরিচালনা করে আমিও সেভাবেই পরিচালনা করছি।
জানতে চাইলে শেরপুর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. নূর কুতুবে আলম সিদ্দিক জানান, অনুমোদনহীন ভাটা অবৈধভাবেই চলে আসছে এতোদিন। এখন সব অনুমোদনহীন ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ এবং এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!