ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

কয়লা সংকটে মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

রিয়াজ উদ্দিন,কক্সবাজার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৭:৫৮ পিএম

কয়লা সংকটে মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

কয়লা সংকটের কারণে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটেরই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। পুরোপুরি আমদানি নির্ভর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কবে আবার উৎপাদনে আসতে পারবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জাপানি ঋণে সার্বক্ষণিক উৎপাদন ও ব্যয় সাশ্রয়ের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে মাতারবাড়ীর মতো বৃহদায়তনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অনুমোদন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। গত ৫ আগস্টের দেশের পটপরিবর্তন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও মামলার বেড়াজালে পড়ে বেহাল দশা আওয়ামী লীগ সরকার। এতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে এসব প্রকল্প গুলো।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বড় অংকের ঋণ করে এগুলো নির্মাণ করা হলেও এসব কেন্দ্রের জ্বালানি ও এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব ছিল। এছাড়া দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতাও এখন বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলছে।

তবে কর্তৃপক্ষ জানান, চলতি নভেম্বরের শেষ দিকে বিদেশ থেকে কয়লা এলে এ সংকটের নিরসন হবে। কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, চুক্তি অনুযায়ী সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অপর ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হয়। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখন পর্যন্ত জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। সেই মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তিন বছর কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে। সেই আদেশটি পরে উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। 

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘কিছু মেন্টেইনেন্সের কাজ চলছে আর কয়লা সংকট এ দুটি কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংকট কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাসে আবার চালু হবে।’

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাতারবাড়ী প্রকল্পে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫৬ হাজার ৯৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রকল্প ঋণ রয়েছে ৪৭ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৭ হাজার ২১১ কোটি টাকা। আর সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব তহবিল ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

সিপিজিসিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের মোট ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ দশমিক ২০ শতাংশ। আর বন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি শতভাগ।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!