কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক মাসের ব্যবধানে পল্লী বিদ্যুতের বিল দ্বিগুণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার ( ৩০ মার্চ) রাতে উপজেলার পান্টি বাজার এলাকায় এক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় এমপি ও বিদ্যুত, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের কাছে কয়েক শত গ্রাহক বিলের কপি নিয়ে এমন অভিযোগ করেন।
সেসময় জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহিদ হোসেন জাফর, কুমারখালী পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মো. আনছার আলীসহ কয়েক শত গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। পরে আলোচনা শেষে ডিজিএম কে বিল কমানোর নির্দেশনা দেন এবং গ্রাহকদের বিল কমানোর আশ্বাস দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান এমপি।
গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে তারা যেসমস্ত মিটারে আবাসিক বিল দিয়েছেন। একই মিটার গুলোকে মার্চ মাসে বাণিজ্যিক মিটার দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বিল দ্বিগুণ করেছে। এমন মনগড়া বিলে তাঁতি, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা বাণিজ্যিক মিটারের বিল বাতিলের দাবি জানান।
শনিবার রাতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পান্টি ডিগ্রী কলেজ গেটের সামনে কয়েক শত গ্রাহক বিলের কপি নিয়ে ভিড় জমিয়েছে। স্থানীয় এমপি পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমের সাথে বিল নিয়ে আলাপ করছে।
এসময় পান্টি ইউনিয়নের দাসবশী গ্রামের তাঁতি ও ভ্যানচালক মো. আইনাল হোসেন জানান, তাঁর বাড়িতে একটি বৈদ্যুতিক পাওয়ারলুম যন্ত্র আছে। সেখানে লুঙ্গী তৈরি করেন। সংসারের বর্ধিত আয়ের জন্য মটর চালিত একটি ভ্যানগাড়িও চালান তিনি। আর আলোর জন্য দুটি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালান। এতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর বিদ্যুত বিল এসেছিল এক হাজার ১৬৪ টাকা। কিন্তু একইভাবে বিদ্যুত ব্যবহার করে মার্চ মাসে বিল এসেছে এক হাজার ৯৮০ টাকা। তাঁর ভাষ্য, পল্লী বিদ্যুতের লোক মনগড়া বিল করেছে।
পান্টি বাজার এলাকার শাহিন আলী জানান, গতমাসে মিটার ছিল আবাসিক। তখন বিল এসেছিল মাত্র ৩০৪ টাকা। আর একমাসের ব্যবধানে তাঁর মিটার বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। এবার বিল এসেছে দুই হাজার ৭৭১ টাকা। তাঁর ভাষ্য, তাঁর মত শত শত গ্রাহকের মিটারে বিল দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বাণিজ্যিক মিটার বিল বাতিলের দাবি জানান।
পান্টি কলেজপাড়া এলাকার জামাল উদ্দিন জানান, পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ অসৎ উপায়ে তাঁর মিটারে বিল বাড়িয়েছে। চলতি মাসে তাঁর বিল এসেছে ছয় হাজার ৯৯ টাকা। গ্রাহকরা বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে জানিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য, এমপি তাদের বিল কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
পল্লী বিদ্যুত কুমারখালী জোনাল কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৭১ হাজার গ্রাহক রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের পিবিএস নীতিমালা ২০২০ এর ৩০০ - ৩০ /১৮ অনুচ্ছেদের ( সি) অনুযায়ী একটি মিটার থেকে দুই ধরনের বিদ্যুত ব্যবহার করা হলে সেই মিটারে সর্বোচ্চ দর বিলের আওতায় আনা হবে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী মার্চ মাসে যাচাই - বাছাইয়ের মাধ্যমে বাসাবাড়ির পাশাপাশি পাওয়ারলুম, ব্যাটারি চালিত অটো ও ভ্যান চার্জে বিদ্যুত ব্যবহারের কারণে প্রায় এক হাজার গ্রাহককে আবাসিক মিটার থেকে বাণিজ্য ও ক্ষুদ্র শিল্প মিটারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেজন্য বিলের পরিমান দ্বিগুণ হয়েছে।
রোববার (৩১ মার্চ) সকালে কুমারখালী জোনাল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিল কমানোর জন্য গ্রাহকরা কার্যালয়ের আশেপাশে আনাগোনা করছে। এসময় নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক একজন মসজিদের ইমাম জানান, তিনি ইমামতির পাশাপাশি একটি পাওয়ারলুম চালান। সেজন্য বিদ্যুত অফিস তার মিটারটি আবাসিক থেকে শিল্পে রূপান্তরিত করে হয়েছে। এতে বিল বাড়িয়ে দুই হাজার ৪৬০ টাকা করা হয়েছে। তবে আমাদের জনপ্রিয় এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপে বিল অর্ধেক লেগেছে।
এসময় কুমারখালী পল্লী বিদ্যুত জোনাল কার্যালয়ের ডিজিএম মো. আনছার উদ্দিন জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসমস্ত গ্রাহকরা একটি মিটার দিয়ে দুইটি বিষয়ে বিদ্যুত ব্যবহার করছে। তাদের মিটার গুলো আবাসিক থেকে বাণিজ্য অথবা শিল্প মিটারে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেজন্য প্রায় এক হাজার গ্রাহকের বিল গতমাসের তুলনায় বেশি করা হয়েছে। তবে স্থানীয় এমপি স্যারের নির্দেশে বিল সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া ৪ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ জানান, দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী হলো কুমারখালী। এটি একটি বিশেষ এলাকা। এখানে সাধারণ জনগণের মনে কষ্ট দিয়ে কিছু করা যাবেনা। আবার সরকারি নিয়মের বাইরেও যাওয়া যাবেনা। তিনি বিষয়টি নিয়ে গ্রাহক ও পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছেন। এবং নতুন বিল কমিয়ে পূর্বের ন্যায় বিল গ্রহণের জন্য বিদ্যুত কর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :