ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

লালমনিরহাটের সার না দেয়ায় কৃষি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

নুরুল ফেরদৌস, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৯:২২ পিএম

লালমনিরহাটের সার না দেয়ায় কৃষি কর্মকর্তা অবরুদ্ধ

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

সার দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকদের তোপের মুখে পড়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ। 

 

বুধবার(৮ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদে সারের জন্য টোকেন দিতে গিয়ে উপস্থিত কৃষকদের কাছে অবরুদ্ধ হন তিনি। পরে কৌশলে পালিয়ে রক্ষা হয় তার। 


কৃষকরা জানান, চলতি রবি মৌসুমে আলু সরিষা, ভুট্টা ও তামাকসহ বিভিন্ন জাতে সবজি চাষাবাদে প্রচুর পরিমান সারের প্রয়োজন হয়। এ সময় কিছু অসাধু বিক্রেতা সার গোপনে মজুদ করে কালো বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। ফলে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী হয়েছে। সরকারের নিবন্ধিত সার বিক্রেতাদের কাছে মিলছে না ন্যায্য মুল্যের সার। অথচ অনিবন্ধিত খুচরা বিক্রেতাদের অতিরিক্ত দাম দিলে সার মিলছে। সারের সংকট নিরসনে কৃষকদের চাহিদা বিবেচনা করে বিশেষ টোকেন চালু করে কৃষি বিভাগ।


কৃষি বিভাগের স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরীত টোকেন নিয়ে ডিলার পয়েন্টে গেলে সরকারী দামে সার মিলছে। নয়তো অনিবন্ধিত বিক্রেতার কাছ থেকে বস্তা প্রতি ৫ শত থেকে হাজার টাকা বেশি দামে কিনতে হয়। তাই ন্যায্য মুল্যে সার পেতে কৃষকরা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পিছু ছুটছেন।তারা ইউনিয়ন পরিষদের বসে কৃষকদের টোকেন দিচ্ছেন। সে টোকেনের আলোকে সরকারী দামে সার কিনছে চাষিরা। 

 

বুধবার চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্ত্বরে কৃষকদের সারের টোকেন দিতে বসেন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদ। এ সময় শত শত কৃষক লাইনে দাড়িয়ে যান ন্যায্য মুল্যে সার কেনার টোকেন নিতে। সেখানে মাত্র ৩০/৩৫জন কৃষককে টোকেন দিয়ে টোকেন দেয়া বন্ধ করে এবং  সার শেষ বলে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন চাষিরা। তারা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় কৌশলে পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান আজাদ। সারের জন্য লাইনে দাড়িয়ে থেকেও সার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন চাষিরা। 


কৃষক সামাদ মিয়া  বলেন, আমার প্রায় দেড় একর জমিতে বিভিন্ন ফসল রয়েছে। যার জন্য দুই বস্তা সার কিনতে কৃষি অফিসের লোকের দেয়া লাইনে দেড় ঘন্টা দাড়িয়ে ছিলাম। মাত্র ৩০-৩২ জনকে টোকেন দিয়েই বললো যে আজকের বরাদ্ধ শেষ। আজকে আর সার দেয়া হবে না। কালকে পুনরায় ডেকেছেন। আজকে কাজ ফেলে এসে কোন লাভ হলো না। কৃষি বিভাগের লোকজন আর ডিলার মিলে সার অনাবন্ধিতদের কাছে বিক্রি করছে। নিবন্ধিত ডিলাররা কৃষকদের সার না দিয়ে অনিবন্ধিত বিক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে। সার তো কেউ বাড়িতে উৎপাদন করে না। তাহলে অনিবন্ধিত বিক্রেতারা সার পেলো কোথায়? প্রশ্ন করেন তিনি।


উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজাদকে তার ব্যবহৃত নম্বরে একাধিক বার কল করে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

 

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার তুষার কান্তি জানান, কিছু কৃষক সংকটের আতংকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে কিনে মজুদ করে রাখছে। ক্ষুদ্র কিছু চাষি সার পাচ্ছে না বলে সংকটের গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা যে পরিমান সার পেয়েছি, তা যাতে কৃষকদের মাঝে সমহারে পৌছে দেয়া যায়। তার জন্য টোকেন সিস্টেম চালু করেছি। সারের বরাদ্ধের চেয়ে অতিরিক্ত কৃষক লাইনে দাড়ানোর কারনে চাপারহাট পয়েন্টে বুধবার সার দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার দেয়া হবে। এতে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে আজাদকে অবরুদ্ধ করেছিল। পরে তিনি কৌশলে চলে এসেছেন। 


কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)  সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, চলতি মাসে চাহিদার অর্ধেক বরাদ্ধ পেয়েছি। যার কারনে সার নিয়ে কিছুটা জঠিলতা তৈরী হয়েছে। তবে বরাদ্ধকৃত সার পুরোটা আমরা পেয়েছি। কিছু কৃষক বর্তমান চাহিদার চেয়ে বেশি কিনে আগামী মৌসুমের জন্য মজুদ করছেন। যার কারনে হয়তো কোন কোন চাষি বঞ্চিত হচ্ছেন। সার পর্যাক্রমে আসছে এবং আসবে। তাই মজুদ না করে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ডিলার পয়েন্টে ক্রয় করতে কৃষকদের অনুরোধ জানান তিনি।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!