সংসারে সচ্ছলতা আর সন্তানদের ভবিষ্যতের আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী। কিন্তু সেখানে চাকরির নামে অংশ নিতে হয়েছিল ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে। যেই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন হুমায়ুন কবির। আর দুলাভাই রহমত আলী ফিরতে চান দেশে।
রাধুনী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজে রাশিয়া গিয়েছিলেন নাটোরের হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী। কিন্তু দালাল তাদের রুশ সেনাবাহিনীর হাতে বিক্রি করে দেয়। পরে ইউক্রেনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন হুমায়ুন কবির।
২৩ জানুয়ারি ইউক্রেন হামলায় হুমায়ুন কবির মারা যান বলে ২৬ জানুয়ারি পরিবারের কাছে খবর আসে। এরপর থেকে পরিবারে শোকের মাতম চলছে।
প্রতিবেশী তোফিক পরশ জানান, দারিদ্র দূর করতে হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী নওগাঁ জেলার আবুল হাসানের ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকায় রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর রাধুনী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে যাওয়ার চুক্তি করেন। পরবর্তীতে আরও ৬ লাখ টাকা নেয়া হয়।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে তাদের প্রথমে সৌদি আরবে নেয়া হয়। সেখানে দুই মাস রাখার পর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে ক্যান্টনমেন্টে চাকরির কথা বলে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি তাদের ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। ২২ জানুয়ারি ইউক্রেনের হামলায় মারা যান হুমায়ুন কবির। বর্তমানে রহমত আলী দেশে ফেরার আকুতি জানাচ্ছেন।
হুমায়ুনের স্ত্রী তারা খাতুন বলেন, ‘মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনের কথা বলে দালালরা আমাদের ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। ২০ জানুয়ারি সবশেষ স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। এখন একমাত্র সন্তান নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না। জমি বন্ধক দিয়ে সুদের ওপর টাকা নিয়ে এই টাকা দিয়েছিলাম। এখন স্বামী হারিয়েছি। অন্তত তার মরদেহ দেশে ফেরত দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
রহমত আলীর স্ত্রী যমুনা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দেশে ফিরতে চায়। সরকার তার ফেরার ব্যবস্থা করুক। দালালরা আমাদের থেকে ১৮ লাখ টাকা নেয়ার পর তাদের রুশ সেনাবাহিনীর কাছে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে।’
হুমায়ুনের মা করিমন বেওয়া বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। ছেলের লাশ আর জামাতাকে জীবিত ফেরত চাই। যারা আমাদের সর্বনাশ করেছে তাদের শাস্তি চাই।’
অভিযুক্ত ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের মালিক আবুল হাসানের নম্বরে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক মণ্ডল বলেন, ‘বাড়ি ও মাঠের জমি বন্ধক দিয়ে দালালের কাছে টাকা দিয়েছে পরিবার। তাই এলাকাবাসী এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :