পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে প্রায় দুইশ বছর ধরে এবার মেলা মাছের সময়মত লিজ না দেওয়ায় আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৩-১৪ জানুয়ারি মাছ মেলায় চলবে। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ নিয়ে যান বিক্রেতারা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠা দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘাইড় ও আইড় মাছ টাটকা কিনতে আসেন মেলায়। এ বছর মেলায় ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ মূলের বাঘাইড় মাছ উঠেছে। আর এ মাছ কেনার প্রস্তুতি তারা নেন বেশ কয়েকদিন আগে থেকে। আমরা প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকি কখন মেলা শুরু হবে। কারণ অনেক দুর্লভ মাছ আছে যা একমাত্র এ মেলায় পাওয়া যায়। মেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। তবে এ বছর মেলা উপলক্ষে মাছের সংগ্রহ বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটা কম। তবে মাছের দাম এবার কিছুটা কম। মেলায় দেশীয় নানা প্রজাতির ফরমালিনমুক্ত মাছ নিয়ে দোকান বসান বিক্রেতারা। মেলায় আগের মত নেই জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীলতা। গেল ক’বছর থেকে প্রশাসন স্থানীয়দের অনুরোধে তা বন্ধ করে দিয়েছে।
জানা যায় মেলায় পার্শবর্তী কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওর ও সুনামগঞ্জের টাঙুগুয়ার হাওর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন। মেলায় বিভিন্ন ধরনের খাবার হোটেল,তিলুয়া-বাতাসা,খৈ-মুড়ি,নানা রকম মৌসুমী ফল,শিশুদের খেলনা, কিশোরী-তরুণীদের প্রসাধনী,শীতের কাপড়-চোপড়, বাঁশ-বেত ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র,ঘর-সংসারের নানারকম মাটির বাসন-কোসন,কাঠের জিনিস,লোহালক্কড়ের সামগ্রীকৃষি যন্ত্রপাতি,হরেকরকম চোখ ধাঁধানো পণ্যের দোকান বসেছে। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা জগন্নাথপুর থেকে মাছে মেলাতে আগত সুহেল আহমদ বলেন আমি শেরপুর মাছের বাজারে এসেছি এই মেলা আমার মেলার প্রথম দিন। আমি এই প্রথম শেরপুর মাছের মেলাতে এসেছি, মাছের মেলায় ঘুরাফেরা করে ভালই লাগছে অনেক ধরনের এখানে মাছ রয়েছে দেশি-বিদেশি ও লোকাল নদীর মাছ দেখা যাচ্ছে। তবে চেষ্টা করে যাচ্ছি একটি মাছ কিনার জন্য।
যুক্তরাজ্য থেকে আগত একজন প্রবাসী লিংকন বলেন আমি যুক্তরাজ্য থাকি, আমি শেরপুর মাছে মেলাতে এসেছি।
আমি যুক্তরাজ্য থেকে ১৭ বছর পরে মাছের মেলাতে এসেছি তবে মাছ ঘুরে ঘুরে পছন্দ করছি। মাছ দাম দূর করে যাচ্ছে ,তবে পছন্দ হলে তবে কিনে নিয়ে যাব।
বিক্রেতারা বলেন আমাদের মেলায় ২০০ বছর আগের ঐতিহ্যবাহী মেলা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। আমাদের বাপ দাদা আমল থেকে বাপ দাদা আমল থেকে এ মেলা। গতকাল পর্যন্ত মাছ বিক্রি করা হবে।
মেঘনা মৎস মালিকা মিজানুর রহমান জানান মাছের মেলা চলতেছে আগামীকালও মেলা চলবে এই মেলা গার্জিয়ান ছাড়া ছাড়া চলতেছে। আমরা অনুরোধ করবো জেলা প্রশাসককে মেলাটিকে টিকিয়ে রাখর জন্য ১৫ দিন আগে থেকে টেন্ডার দেওয়ার জন্য। সিলেট বিভাগের প্রত্যেক অঞ্চল হাওর থেকে ও বিল থেকে এই মাছগুলো সংগ্রহ করা হয়। তাই ২-৩ মাস আগে থেকে এই মাছগুলো সংগ্রহ করে রাখা হয়। যাতে মেলা শেরপুরে মেলা উপলক্ষে উৎসবে নিয়ে আসা হয়।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১ং খলিলপুর চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরীর বলেন পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলা বসেছে আগামীকাল থেকে শুরু হবে তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এবং হাওর অঞ্চলের আজকে রাতে হাওরের মাছগুলো রাতে বেচাকিনা করবে। এখানে প্রায় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়।
মাছের মেলা আয়োজক কমিমিটির সদস্য হোসেন খাঁন বলেন আমাদের মৌলভীবাজার জেলাতে অনেক জেলা প্রশাসক এসেছেন। আমাদেরকে মেলা কমিটিকে সহযোগিতা করবেন ভুমি বন্দবস্ত ব্যবস্থা করে দিবেন বলেন। কিন্তু কথা দেন কিন্তু আজ পর্যন্ত মেলার জায়গা বাস্তবায়ন হয়নি। আগামীতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এ মেলার জন্য নির্ধারিত একটি জায়গা ব্যবস্থা করে দেন। বিশাল আকার মেলাটা যে আয়োজক করে থাকি আমরা। দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে এবার লোকজন কম হচ্ছে ।আমরা প্রতিবছর ১৩ থেকে ১৪ তারিখ আমরা মেলা করে থাকি কিন্তু এবার একদিন আগে মেলা বসানো হয়েছে। সময়মত মেলা প্রচার প্রচারণ হয়নি। মেলা লিজ সময়মত না দেওয়ার জন্য আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :