অরাজক পরিস্থিতি বোঝাতে বাংলায় বেশ জনপ্রিয় প্রবাদ ‘মগের মুল্লুক’। এই প্রবাদ বাক্যের সাথে বাঙ্গালির সখ্যতা বেশ আগে থেকেই। কথায় কথায় প্রায়শই বলতে শোনা যায়,মগের মুল্লুক নাকি? মুখে মুখে চলে আসা এই বাক্যের অর্থ হচ্ছে বিশৃঙ্খল অবস্থা বা অরাজক পরিস্থিতি। যেরকম পরিস্থিতিতে কেউ কারও তোয়াক্কা করে না,কেউ কারও কথা শোনেও না। ছোট্ট এই বাক্যটির পেছনে নানা ইতিহাস ও আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও এই নামে একটি হোটেলের খোঁজ পাওয়া গেছে ঝিনাইদহে। নামের কারণে হোটেলটিতে প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে খাবার খেতে আসছেন ভোজন রসিকরা।
অতীতে বাংলায় বিভিন্ন দেশের জলদস্যুরা আসতো চুরি ডাকাতি বা সম্পদ লুট করতে। তাদের নিয়ে অনেক গল্প,কবিতা,ছড়াও লেখা হয়েছে। একটি ভয়ানক দস্যু আসতো মগ রাজার দেশ থেকে। এরা ছিল মূলত পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের রাজাকার বাহিনী। মগরা এ অঞ্চলে এসে যে অরাজকতার সৃষ্টি করতো তার মাত্রা বোঝানোর জন্য বলা হতো ‘মগের মুল্লুক’ অর্থাৎ যা খুশি তাই করার দেশ। তবে এতসব ইতিহাসের মাঝে এই নামে একটি হোটেলের দেখা মিলেছে ঝিনাইদহে। ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের আমতলা নামক স্থানে রাস্তার পাশে হোটেলটির অবস্থান। হোটেলটিতে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বিক্রি করা হয় হালিম,লুচি-আলুর দম,গরুর মাংস,নেহারি,খিচুড়ি সহ সুস্বাদু সব খাবার। এমনকি ১ হাজার টাকা কেজিতে রান্না করা গরুর মাংস,১২০ টাকা কেজিতে খিচুড়িও বিক্রি করা হয়। ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা সুস্বাদু এসব খাবার খেতে প্রতিদিন ভীড় করেন ঝিনাইদহ সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ।
হোটেলটিতে খেতে আসা ফারদিন আবরার রাবু বলেন,‘বন্ধুৃদের মাধ্যমে জানতে পেরে হোটেলটিতে খেতে এসেছি। অন্যান্য হোটেলের থেকে এখানে রান্নাও ভালো,নামটাও ব্যতিক্রম। খাবারের অনেকগুলো আইটেম আছে। বলতে গেলে অন্যান্য জায়গার থেকে সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে এসব খাবার।’
জীম নামে আরেকজন বলেন,‘মগের মুল্লুক’ নাম শুনে হোটেলটিতে এসে হালিম খেলাম। এককথায় অসাধারণ স্বাদ।
হৃদয় নামে আরেক ভোজনকারী বলেন,‘মান বজায় রেখে এত কম টাকায় বর্তমান সময়ে খাবার পাওয়া দুস্কর।’
‘মগের মুল্লুক’হোটেলের মালিক রোকন শেখ বলেন,‘বিভিন্ন নামী দামি হোটেলে খাওয়ার আগে ও পরে খাবারের মূল্য বা দাম পাল্টে যায়। এতে অরাজক পরিস্থিতি শুরু হয় হোটেল কর্তৃপক্ষ ও ভোজনকারীদের মাঝে। হোটেল মানেই যে ‘মগের মুল্লুক না,এটা বোঝাতেই এমন নাম দিয়েছি।
অল্প কয়েকদিন দোকানের বয়স হলেও ‘মগের মুল্লুক’নাম ও খাবারের স্বাদের কারণে ঝিনাইদহ সহ আশপাশের কয়েক জেলায় এই দোকানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ছোট্ট এই দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার খাবার।
আপনার মতামত লিখুন :