মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামে অবস্থিত বড়ছড়া থেকে প্রতিনিয়ত অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু তুলছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা জুয়েল মিয়ার নেতৃত্বে একটি চক্র। ট্রাক ও ট্যাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণের কারনে গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ সড়ক ও চা বাগান সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় দেখেও দেখছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ব্রিজের আশপাশ থেকে যেভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে, এর ফলে নদীর তলদেশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ওই গর্তে বন্যার পানি ঢুকে ঘূর্ণাবর্তার সৃষ্টি হলে বালু ও মাটি সরে গিয়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে ব্রিজ পাড়ের জনবসতি, ফসলি জমি ও শতশত ঘরবাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।
জানা যায়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রের মূল হোতা মির্জাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা জুয়েল মিয়ার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইন এবং বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মামলাসহ একাধিক মামলা থাকার পরও এলাকায় সে দাপটের সাথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট করা হলে উচ্চ আদালত ওই ছড়া থেকে বালু উত্তোলনে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালুখেকো চক্রটি বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন-নিবেদন করার পরও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ছড়ার বিভিন্ন অংশের বালু উত্তোলন করে বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখা হয়েছে। গ্রাম্য আভ্যন্তরীণ সড়কে বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ট্যাক্টরসহ বিভিন্ন যানবাহন যাতায়াতের কারনে সড়ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃক নির্মিত সুইসগেটের পেছনের অংশ ছড়া দেবে গেছে। এছাড়া দিনারপুর চা বাগানের একটি টিলার চা প্লান্টেশন এলাকা ছড়ায় নিমজ্জিত ও বাগানের সেতু ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ‘২০০৬-০৭ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ এই এলাকার সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার মানুষের শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির একমাত্র উৎস এই বড়ছড়া সুইসগেটটি নির্মাণ করে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার সাতটি গ্রামের ২০-২৫ হাজার কৃষকদের চাষাবাদের জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইসগেট, সরকারি সেতু, চা বাগানের প্লান্টেশন টিলার অংশবিশেষ। ইতোমধ্যে সুইসগেটটির পেছন দিকে প্রায় ২০ ফুট ছড়া নিচের দিকে দেবে গেছে এবং দিনারপুর চা বাগানের একটি সেকশনের কিছু অংশ ছড়াগর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক মো. শফিক মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু লোকেরা আমাদের এই ছড়ার মধ্যে বালু তোলার ফলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এলাকার ঘর-বাড়ি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের এলাকা বাঁচান।’
কৃষক ইসহাক মিয়া বলেন, ‘বড়ছড়া সুইসগেট আমাদের সাতটি গ্রামের প্রাণ। আজ এটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমাদের এলাকার হাজার-হাজার হেক্টর জমি এই সুইসগেটের পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল ফলিয়ে আমরা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছি।
বড়ছড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মদ মছদ্দর আলী বলেন, ‘এলজিইডি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৯ সালে অফিস থেকে আমাদের জানান, বালু উত্তোলন বন্ধ করতে না পারলে সুইসগেটটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। আপনারা এলাকাবাসী সোচ্ছার হন। আমরা সোচ্ছার হলেও বিগত দিনে আওয়ামী লীগের প্রভাবের কারনে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারিনি। যুবলীগ নেতা জুয়েল, জাহাঙ্গির, শাহজাহান প্রমুখরা এখনো আমাদের হুমকি দেয়। তারা আমাদের সেক্রেটারিকে হুমকি দিয়ে বলে হাইকোর্টে রিট করায় তার যদি বালু তোলা বন্ধ হয় তাহলে ১৬ লাখ টাকা তাকে দেওয়া লাগব। আমরা এখনো আওয়ামী লীগের বালু দস্যুদের কাছে জিম্মি অবস্থায় আছি।’
১ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকায় প্রচুর বালু উত্তোলন হবার ফলে এলাকার সুইসগেটসহ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া এলাকায় ২-৩ স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী আছে। গ্রাম্য ছোট সড়কে বড় বড় ট্রাক ঢোকানোর ফলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতে পারে।
দিনারপুর চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক ‘আমাদের বাগানের সাইড দিয়ে বালু দস্যুরা নিয়মিত বালু তোলে। আমরা বাগানের পক্ষ থেকে ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার চিঠি দেয়া হলেও কোন কিছুতেই কাজ হয় না।
বালু লিজের ব্যাপারে জুয়েল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন,আমি আওয়ামী যুবলীগ দল করা বলে আমার নামে মামলা হয়েছে। আমি কিভাবে বালু উত্তোলন করব প্রশ্নেই আসেনা। আমার নামে যে অভিযোগ করার হয়েছে সর্ম্পণ মিথ্যা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘বালুর লিজ খনিজ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়। আমার কাছে একটা আবেদন আসছে রিটের একটা ইন্টেরিম অর্ডার (মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন আদালত কর্তৃক জারি করা আদেশ) এগ্রিমেন্ট কন্টিনিউ না করার কথা বলা হইছে। তারা রিটের কপিটা আমাকে দিয়েছে। আমি এসি ল্যান্ডকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।
আপনার মতামত লিখুন :