নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের শেষের দিকে জামায়াতের নেতাকর্মীদের অজ্ঞাত মাইক্রোবাসে অপহরণ করে তুলে নিয়ে গিয়ে একের পর এক হাতুড়ি পেটার ঘটনা ছিল খুবই ভয়ংকর।
এসব ঘটনার জেরে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী কারাবন্দী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও আত্মগোপনে থাকা নাটোর সদরের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নির্যাতিত দুই নেতা বাদী হয়ে এই দুটি মামলার আবেদন করেছেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ডা: ফজলুর রহমান বাদী হয়ে সাবেক এমপি শিমুলসহ ১৫জনের নামে এবং সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘি ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকসহ ২৯জনের নামে মামলার আবেদন করেছেন।
ডা: ফজলুর রহমান তার মামলায় বলেছেন, গত বছরের ২৬ অক্টোবর রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মোটর সাইকেলে নিজের বাড়ি ফেরার পথে নলডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে আসামীরা পথরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও রামদা দিয়ে কুপিয়ে মৃত ভেবে তাকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে এখনো তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি।
অপর দিকে আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে করা মামলায় বলা হয়, বাদী একজন ইসলামী আলোচক। তিনি উপজেলার ছাতার বাড়িয়া শাহী জামে মসজিদের জালসায় আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখার সময় উপস্থিত প্রধান অতিথি তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ১৫আগস্টে নিহতদের নাম ধরে ধরে দোয়া করার নির্দেশ দেন। মোনাজাতে তিনি নাম ধরে ধরে দোয়া না করায় প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক জালসায় তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। পরবর্তিতে পলকের নির্দেশে আসামীরা গত বছরের ১০ নভেম্বর শুক্রবার দুপুরে বাদী উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়িয়ে মোটর সাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে তাকে উপজেলার রহিম উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের পাশ থেকে জোর করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। মাইক্রোবাসের মধ্যেই হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার হাত পা ভেঙ্গে গুরুতর জখম করে। পরে অচেতন অবস্থায় মৃত ভেবে বগুড়া জেলার নন্দীগ্রামের একটি পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে যায়। দীর্ঘদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও আজ পর্যন্ত তিনি পুরোপুরি সুস্থ হন নাই। তার মামলায় পলক ছাড়াও পলকের শ্যালক অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেল এবং পলকের ঘনিষ্টজন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ও চৌগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম ভোলাকে আসামী করা হয়েছে। উভয় বাদী কোন কারণ ছাড়া তাদেরকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে করা নির্মম নির্যাতনের তদন্ত করে উপযুক্ত বিচার দাবী করেছেন। উভয় মামলা দায়েরের সময় উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জেলা জামায়াতের সহকারী সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম রাসেল, নলডাঙ্গা জামায়াতের আমীর আব্দুর রফ, জামায়াতের নেতা লাবলু, জামায়াতের নেতা আব্দুর রাজ্জাক,উপস্থিত ছিলেন।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ও সিংড়া থানার ওসি মো. আসমাউল হক বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। মামলার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :