লালমনিরহাট কালীগঞ্জ উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে একাকার হয়ে আছে। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ চোখে পড়ছে। সরিষা চাষে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। বিনামূল্যে বীজ সার বিতরণ, খরচ কম এবং বিক্রিতে ভালো দর পাওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ ঝুঁকছেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় সরিষা ফলনে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরিষা আবাদে প্রণোদনা হিসেবে সরকার ৮৫০হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন। অনুকূল পরিবেশে কৃষকদের সময়োপযোগী উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকরা জানান, এ উপজেলার বেশির ভাগ জমিতে দুটি ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। পাশাপাশি যদি সেই জমিতে আরো একটি ফসল সরিষা চাষ করা হয় তাহলে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে,অপর দিকে পুষ্টিকর ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে। এ মৌসুমে বারি ১৪ ,১৭, বিনা , ৯,৪,সহ নানা জাতের চাষ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগাম আমন কাটা ও মাড়াইয়ের পর বেশিরভাগ জমি অনেক দিন পর্যন্ত পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকার ওপর। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছেন। তাই সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে ইরি বোরো চাষে খরচ করার পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটছে তাদের।
সরেজমিন কালীগঞ্জ উপজেলার দুহুলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে সরিষা ক্ষেত হলুদ ফুলে একাকার হয়ে আছে। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ চোখে পড়ছে। হলুদের সমারোহে সজ্জিত সরিষার প্রতিটি ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সরকার কৃষকদেরকে বীজ সার বিনামূল্যে বিতরণ করায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মৌ মাছিরা। মৌ মৌ শব্দে পুরো মাঠ মুখরিত হয়ে উঠেছে। কম খরচে বেশি লাভের আশায় স্থানীয় কৃষকরা অধিক ফলনশীল এই ফসলের আবাদ করেছেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
দুহুলী এলাকার কৃষক মো.মকবুল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষ করছি। এ মৌসুমে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়ায় ১ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়। বর্তমানে সরিষার মাঠের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
তিনি আরো বলেন, সরিষা আবাদে খরচ কম ফলন বেশি হয়। তাছাড়া সেচ, কীটনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না। গত বছর সরিষা আবাদ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছি।
উপজেলার সোনারহাট এলাকার কৃষক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এ মৌসুমে ১০বিঘা করে জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কৃষি অফিস বীজ ও সার দিয়েছে। এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে বীজ, সেচ, সার, লাগানো,কাটাসহ অন্যান্য খরচ ১০ হাজার টাকা লেগে যায়। কিন্তু একই জমিতে সরিষা চাষ করতে মাত্র ২ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না। প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ৫-৬ মণ পর্যন্ত হয় এবং বপণের ৮০-৯০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সরিষায় দ্বিগুণ লাভ হয়।
বর্তমানে ক্ষেতের মধ্যে সরিষার ফুলে ক্ষেত ভরে গেছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে ফুলে সরিষা আসবে। ফলন ভালো ও বাজারদর ভালো থাকলে এ চাষে লাভবান হবো।
কৃষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। চারা গজিয়ে এখন ফুল আসছে। বাজারে তেলের দাম বেশি হওয়ায় সরিষার দামও ভালো পাব বলে আশা করছি। সরিষা তুলে যেহেতু ধান লাগানো যায় আবার ধানে সারও কম প্রয়োগ করা লাগে, তাই গত কয়েক বছর ধরে সরিষা আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছি।
চললা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় এবার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন জাতের সরিষার ওপর ২টি প্রদর্শনী ও ১০৫জন কৃষককে সরিষা চাষে সরকারি প্রণোদনা এবং বীজ সহায়তা দেওয়া সরিষার আবাদ বাড়াতে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, সরিষা হলো একটি লাভ জনক ফসল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরিষা চাষ ঝুঁকিমুক্ত। তবে প্রতি বছর সরিষা চাষের আবাদ বাড়ছে। কৃষি অফিস সব সময় ফলন ভালো করতে কৃষকদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী, বিনামূল্যে বীজ-সার সরবারহসহ সর্বদা নানা রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। তৈল জাতীয় শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরিষা চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :