ইজারা বাতিল করায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে স্বস্তি ফিরেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ এবং মুলাদী উপজেলার সংযোগস্থল মীরগঞ্জ নদীতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ফেরিতে। ইজারা বাতিলের ফলে পূর্বের জোর পূর্বক আদায় করা ৩৫ শ` টাকার ভাড়া এখন সরকার নির্ধারিত ৫ শ` টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঐ রুটে চলাচলকারী সকল যানবাহন ও তিনটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবুগঞ্জ এবং মুলাদী উপজেলার সংযোগস্থল মীরগঞ্জ নদীর ফেরিঘাট ৩ বছর ইজারার জন্য আড়াই কোটি টাকা দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। কিন্তু সেই আড়াই কোটি টাকার ঘাট স্থানীয় দুই পক্ষের রেষারেষিতে ১৬ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। যার প্রভাব পড়ে স্থানীয় তিন উপজেলার বাসিন্দা ও সকল যানবাহন চালক মালিকদের উপর।
এরই সুবাদে ইজারাদাররা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুন পর্যন্ত টাকা আদায় করতো। ফলে ট্রেইলার ৫০০ টাকার ভাড়া ৩৫ শ` থেকে ৪ হাজার টাকা, ভারি ট্রাক ৪০০ টাকার ভাড়া ২৮ শ` থেকে ৩২ শ` টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ২০০ টাকার ভাড়া ২৪ শ` থেকে ২৮ শ` টাকা, বড় বাস ১৮০ টাকার ভাড়া ২ হাজার থেকে ২৪ শ` টাকা, মিনি ট্রাক ১৫০ টাকার ভাড়া ১৮ শ` থেকে ২৪ শ` টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার ট্রিলার/ট্রাক্টর ১২০ টাকার ভাড়া ১৪ শ` থেকে ১৮ শ` টাকা, মিনি বাস ১০০ টাকার ভাড়া ১২ শ` থেকে ১৫ শ` টাকা, মাইক্রোবাস ৮০ টাকার ভাড়া ১ হাজার থেকে ১৪ শ` টাকা, পিকআপ ৮০ টাকার ভাড়া ১ হাজার থেকে ১২ শ` টাকা, প্রাইভেট কার ৫০ টাকার ভাড়া ৮ শ` থেকে ১ হাজার টাকা, অটো/সিএনজি/ব্যাটারি চালিত ৩ চাকার যান ২০ টাকার ভাড়া ৫ শ` থেকে ৮ শ` টাকা, মটরসাইকেল ১০ টাকার ভাড়া ৫০ থেকে ১ শ` টাকা ও রিকশা/ভ্যান ১০ টাকার ভাড়া ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত আপ-ডাউন ব্যাবদ আদায় করা হতো।
এই টাকা দিতে কেউ অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকে ঘাটে বসে লাঞ্ছিত পর্যন্ত হতে হয়েছে। এমনি চালকদের মারধরের শিকার হতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। অবশেষে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, জুলুম ও নির্যাতনের সত্যতা প্রমাণ পাওয়ার পর বরিশাল জেলা প্রশাসন ও সড়ক জনপদ বিভাগের সিদ্ধান্তে গত (২০ জানুয়ারি) থেকে ইজারা বাতিল করা হয় মীরগঞ্জ ফেরিঘাটের।
ইজারা বাতিলের পর থেকে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও হিজলা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ ও যানবাহন চালক মালিকরা।
জাহিদুল ইসলাম নামে এক ফেরির যাত্রী বলেন, ফেরি পারাপারে মটরসাইকেল ব্যাবদ আপ-ডাউন সরকার নির্ধারিত ১০ টাকা ভাড়া, সেখানে আগে ইজারাদাররা ৫০ থেকে ৬০ টাকা আদায় করতো। রাত হলে সেই ভাড়া ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকতো। বিকল্প কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে পারাপার হতে হতো। এখন কয়েকদিন ধরে পারাপারে সরকার নির্ধারিত ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আগামীতেও যেন সরকার নির্ধারিত মূল্যেই ভাড়া আদায় করা হয়।
মুলাদী উপজেলার আরেক যাত্রী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আগে একটা ব্যাটারি নিয়ে ফেরি পার হতেও ৫০ টাকা করে দিতে হয়েছে। এখন মালামাল নিয়ে বিনামূল্যে ফেরি পারাপার হতে পারছি। ফেরিঘাটে সকল জুলুম নির্যাতন বন্ধ হোক এমনটাই প্রত্যাশা তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষসহ সকল যানবাহন চালক মালিকদের।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে ইজারাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি কিন্তু কখনো কেউ লিখিত আকারে অভিযোগ দেয়নি, সম্প্রতি কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে ইজারাদারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছি। পরে জেলা প্রশাসকের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্ধারিত সময়ের ৭০ দিন আগেই তাদের ইজারা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ইজারা বাতিলই নয়, তাদের অনিয়ম, জুলুম নির্যাতন করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে মীরগঞ্জ ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :