রাজধানীর হাতিরঝিলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, তামিম হত্যার ঘটনায় মো. রাসেল নামের আরও একজনসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
জানা যায়, তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় ৩৬ নং ওয়ার্ডের সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ওমর ফারুক ও আহবায়ক গাজী জাকির হোসেন, সাবেক সেচ্ছাসেবক নেতা বর্তমানে ৩৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আলী হোসেন শাওন, হাতিরঝিল থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রশিদ ওরফে কালা মামুন।
তামিমের পরিবার জানায়, হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মামুন একজন আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও অত্যন্ত অসৎ, উগ্র, পরধন লোভী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী। রাজধানীতে তার নামে বেনামে বেশকিছু অবৈধ ফ্ল্যাট রয়েছে।
মামুন সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্লাট ও জমি মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্লাট দখল করেন। এটা তার আর একটি পেশা। এর আগেও মামুন ডিবি হারুনের শ্বশুর সোলায়মানের সহযোগিতায় ফ্ল্যাট দখলের বাণিজ্য চালিয়েছেন। হারুনের সঙ্গে মামুনের সখ্যতা থাকায় থানায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেয়নি পুলিশ।
তামিমের বাবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ঘটনার দুদিন পার হলেও পুলিশ এখনও মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশের অবহেলাই এর জন্য দায়ী। মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে আবাসন প্রতিষ্ঠান প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কর্ণধার ও বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবি এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মামুনের সম্পৃক্ততা পেলেও তাদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
শনিবার রাতে বিষয়টি জানতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আযম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তামিম হত্যা মামলায় ১৬ জন আসামির মধ্যে আমরা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এরমধ্যে মামলার দুই নম্বর আসামিও রয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজে স্পষ্ট তামিমকে আঘাত করতে দেখা গেছে মামলার দুই নম্বর আসামি প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল লতিফকে।
ওসি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা ৪ দিনের রিমান্ডে রয়েছে, আমরা তাদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
সবশেষ গ্রেপ্তার আসামি মো. রাসেল সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাসেলকে শনাক্ত করা হয়। তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।
এরআগে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর হাতিরঝিল থানা পুলিশের একটি দল বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলমের হাতিরপুলের বাসায় অভিযান চালায়। তবে সেসময় বাসায় কাউকেই পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানা পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবিকে গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ কোনো ঘটনা ঘটিয়ে পার পাবে না।
জানা যায়, জমির মালিক সুলতান আহমেদকে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেড পাঁচটি ফ্ল্যাট দেয়ার চুক্তি থাকলেও, তারা দুটি হস্তান্তর করেছে।বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুন সাহেবের শশুরের কাছে বিক্রি করে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ নামের ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার শেখ রবিউল আলম রবি। ফ্ল্যাটটি তারা অবৈধভাবে জবরদখল করে রেখেছিল। যা নিয়ে গত তিন বছর ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো।
বৃহস্পতিবার সকালে জমির মালিক সুলতান আহমেদের ছেলে ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :