ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সফল উদ্যোক্তা পাপ্পু ফায়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম

সফল উদ্যোক্তা পাপ্পু ফায়ার

মো. পাপ্পু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে অনেকেই তাকে পাপ্পু আগুন নামেই চেনেন। স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান তিনি। পরিবারের ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে চাকরি করবেন। তবে পরিবারের কথায় সায় না দিয়ে ছোট বেলা থেকেই নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে কয়েকজন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। ছোট বেলা থেকে পুষিয়ে রাখা সেই স্বপ্ন আজ সফল। রাজধানীর ঝিগাতলায় পাপ্পু লেদার ক্র্যাফ্ট নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে ২৫-২৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। তা তাকে ব্যবসা পরিচালনায় অনুপ্রেরণা জোগায়।

ব্যবসা জীবনে অনেক প্রতিকূল পরিবেশ পার করেছেন পাপ্পু। সেসব গল্পই শেয়ার করেছেন আমাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে ব্যবসার খাতায় নাম লেখাই। শুরুতে নিজের কষ্টের জমানো ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করি। প্রথমে আমার পরিবার-পরিজনরা আমাকে সহযোগিতা করেনননি। তারা ভেবেছিলেন আমি ছোট মানুষ, ব্যবসা করতে পারবো কি-না; এই সংঙ্কায় ছিলেন। কিন্তু তারা কোনোদিন ভাবেননি প্রতিভা এবং আত্মবিশ্বাস একজন মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। আমার মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস ছিল বলেই আজকে আমি একটি প্রতিষ্ঠান দ্বার করিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১০ সালে ব্যবসা শুরু করেছি। এখন ২০২৫ সাল। এই ১৫ বছরে অনেক চড়াই উতরাই পার করতে হয়েছে। অনেক প্রতিকূল পরিবেশে পড়েছি। পাশে থেকে কেউ সহযোগিতা করেনি। স্বার্থপর এই পৃথিবীতে মানুষ মানুষকে সহযোগিতা করতে চান না। তবে একজন মানুষ জীবনে কোনো কিছু করতে গেলে তাকে পেছন থেকে কিভাবে পথকে বাধাগ্রস্ত করবে, সেটা খুব ভালো করেই জানে তারা। অনেক ব্যবসায়ীরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। তারা বলেছেন, আমি চিটার, ব্যবসায় টিকতে পারবো না, মানুষের টাকা মেরে খাবো ইত্যাদি। সামাজিকভাবে অনেক মানুষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তবে নেটিজেনদের কথা না ভেবে আমার লক্ষকে সামনে রেখে মহান আল্লাহর নাম নিয়ে এগিয়ে চলেছি স্বপ্ন পূরণের আশায়। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে জীবনে। এখনও নিচ্ছি। তবুও স্বপ্ন পূরণে নিজেকে ব্যর্থদের তালিকায় রাখতে চাইনি।’  

করোনার কথা উল্লেখ করে পাপ্পু বলেন, ‘যখন করোনা শুরু হয়, তখন আমার ব্যবসার সবেমাত্র ভালো পর্যায়ে যেতে শুরু করেছে। খুব আশা ছিল তখন মোটা অংকের টাকা দিয়ে দোকানে জুতা উঠাবো। কিন্তু হঠাৎ করেই দেশে করোনা শুরু হয়। এরপর সরকার লকডাউন দেয়। জীবনের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পার করেছি তখন। আমার আশেপাশের অনেক মানুষ এই পেশায় টিকতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। চোখের সামনে কত মানুষকে দেখেছি অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করেছে। সে সময় লকডাউন থাকা অবস্থায় আম্মা অসুস্থ ছিল। অসুস্থ আম্মার জন্য প্রতিদিন ঔষুধ কিনতে হতো। একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে ব্যবসা খারাপ। এরপর আবার আম্মার জন্য ঔষুধ কেনা। খুবই খারাপ পরিস্থিতি ছিল। সে সময়কার কথা মনে হলে এখনও কান্না করি আমি।’

তিনি বলেন, ‘১৫ বছরের ব্যবসাকালে অনেক অজানা কথা ভিতরে চাপা দিয়ে রাখি। যেসব কথা কাউকে বলতে চাই না। এখন নিজের ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে আমার প্রতিষ্ঠানের শাখা খুলতে। উত্তরা, গুলশান অথবা বনানীতে শাখা খুলতে চাই। বেকার যুবকদের সঙ্গে করে নিজে আরও ভালো কিছু করতে চাই।’
পাপ্পু বলেন, ‘এক সময় ৪ হাজার টাকা মাসে মানুষের দোকানে চাকরি করেছি। পরিবারে স্বচ্ছলতা থাকায় খুব একটা বেশি অসুবিধা হয়নি। তবে ছোট মানুষ হিসেবে ব্যবসার খাতায় নাম লেখানোর পর পরিবার বিষয়টি মেনে নেয় না। ৪ হাজার টাকায় মানুষের দোকানে চাকরি করা এই আমি বর্তমানে মাসে আয় আমার প্রায় ৫ লাখ টাকা। এখান থেকে ২০-২৫ জন কর্মচারীর বেতন দিতে হয়। আমার প্রতিষ্ঠানে তাদের কর্মসংস্থান আমাকে কাজে আরও অনুপ্রেরণা জোগায়।’

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!