রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একটি হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তার কক্ষ দখল করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগেরই কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
বুধবার (১ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মাখদুম হলে এঘটনা ঘটে। রাত ১০টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে করা এক পোস্টে এই অভিযোগ তুলে ধরেন ওই নেতা। শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করে দল থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও ওই পোস্টে লিখেছেন তিনি।
অভিযুক্তরা হলেন, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মিনহাজুল ইসলাম, শাহ মাখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মোহন্ত ও কর্মী ইমন। অভিযুক্তরা রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
অন্যদিকে অভিযোগকারী ছাত্রলীগ নেতা তাজবিউল হাসান অপূর্ব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তার স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা চলছে। তিনি শাহ মাখদুম হলের ২০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পরে হল শাখা কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে অঘোষিতভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হল শাখা পরিচালনা করছেন।
তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমার স্নাতকোত্তরের দুইটা পরীক্ষা হয়েছে এবং তিনটা এখনো বাকি আছে। বাকি পরীক্ষাগুলো ১২ মে এর পরে হবে। আমি মঙ্গলবার আমার জিনিসপত্র নিয়ে ঢাকা চলে এসেছি। ওরা ভেবেছে, আমি হল ছেড়ে চলে এসেছি। এই ভেবে ওরা আমার রুমমেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকেও রুম ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আমার রুমমেট বলেছে, `অপূর্ব ভাইতো হলে আসবে। উনি যেদিন হল ছেড়ে চলে যাবে, আমিও সেদিন চলে যাবো।` আমার সঙ্গে ওই ছেলেটা আর একটা লোকাল ছেলে থাকে প্রটেকশনের জন্য।
তিনি বলেন, এসব জানতে পেরে আমি মিনহাজ ভাইকে কল দিই। তখন উনি আমাকে গালাগালি দিয়ে তর্কাতর্কি করেন। আমি বলি, `আমি হলের সভাপতি ভাই। আমার রুমে দশজনও থাকতে পারে। আপনাকে কৈফিয়ত দেবো কেনো? আমি কি বাবু ভাইয়ের কনসার্ন ছাড়া ননপলিটিক্যাল ব্লকে একটা ছেলেকেও তুলেছি? পলিটিক্যাল ব্লকে একটা ছেলেকেও তুলিনি আমি। কমিটি হওয়ার পর থেকে আমি নিষ্ক্রিয়। অভিমান করে আমি আর যায়না রাজনাতির সাথে।`
তখন উনি আমাকে বাবু ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলে বলেন, `তুই বাকি তিনটা পরীক্ষা বাড়ি থেকে দিবি।` বিষয়টি বাবু ভাইকে জানালে তিনি বলেন, `ঠিক আছে। আমি মিনহাজকে বলে দিচ্ছি।` মিনহাজ ভাইকে কল দিলে তিনি বলেন, `বাবু ভাই রুম লক করে দিতে বলেছে।` তখন আমি, `বলি আমার রুমমেটরা কোথায় থাকবে ভাই?` উনি বলেন, `সেটা আমি জানিনা। তুই রাজশাহী এসে আমার সঙ্গে দেখা করবি। তারপর সমাধান করবো।` আবার বাবু ভাইকে কল দিয়ে বিস্তারিত জানালে তিনি বলেন, `ঠিক আছে দেখছি।`
এরপরে আমার হলের মিঠু আমাকে কল দিয়ে বলে, `ভাই, আপনি নাকি বলেছেন যে, "আমার রুমে যেকয়জন গিয়েছে, রাজশাহী গিয়ে তাদের ব্যবস্থা করবো।" আমি বললাম, `হ্যা, বলেছি। আমার রুমে যাবি কেনো?` তখন বলে, `ঠিক আছে ভাই। রাজশাহী আসেন। আপনার বাকি তিনটা পরীক্ষা কিভাবে দেন, দেখছি।` সবকিছু বাবু ভাইকে জানালেও তিনি ডিরেক্ট কোনো পদক্ষেপ নেননি। এরপরেই আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছি। পোস্ট করার পরে বাবু ভাই আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করা কথা বলেছেন। ডিলিট করতে না চাওয়ায় তিনি বলেন, `পোস্ট ডিলিট না করলে তোর মত তুই থাক। আর সমাধান করতে পারলে, কর।` আমি ঢাকাতেই আছি। সাদ্দাম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবো এবিষয়ে।
আপনার দুইজন রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ও আবাসিক শিক্ষার্থী কিনা জানতে চাইলে তাজবিউল হাসান অপূর্ব বলেন, আমি আবাসিক। আর ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিন্তু আবাসিক না।
আপনার রুমে অনাবাসিক শিক্ষার্থীকে রেখেছেন কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি করতে গেলে এরকম দুয়েকজনকে রাখা লাগে ভাই। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতিরতো ছাত্রত্বই নাই! সে হলে থাকেনা? আর আমিতো হলের ভাড়া দিয়ে পাঁচবছর রয়েছি। রাজনৈতিক প্রয়োজনে অন্য হলের ছেলেপেলেও নিয়ে এসে রাখা লাগে। আমার একজন রুমমেটের বাড়ি বিনোদপুরে। নতুন কমিটি হওয়ার পরে এক বড়ভাইয়ের পরামর্শেই আমি ওকে লোকাল ছেলে হিসেবে আমার রুমে রাখছি।
সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে অভিযুক্ত মিঠু মোহন্ত বলেন, আমি না বরং উনিই (অপূর্ব) আমাকে গালাগালি করেছেন এবং হুমকি দিয়েছেন। আমরা ওনার রুম দখল করতে যাবো কেনো? বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি সিট বাণিজ্য বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। অপূর্ব ভাইয়ের বিরুদ্ধে সিট বাণিজ্যের অনেক অভিযোগ আছে। মূলত আমাদের কাছে তথ্য ছিলো যে, উনি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে একটা ছেলেকে ওনার রুমে রেখেছেন। তাই, আমরা ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলেছি যে, সে টাকার বিনিময়ে হলে আছে কিনা বা, আবাসিক কিনা।
তিনি আরো বলেন, ওই ছেলেকে যে উনি হলে তুলেছেন, সেটা হলের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও জানেনা। ওই ছেলে পলিটিক্সও করেনা, সে অনাবাসিক। উনি (অপূর্ব) সভাপতি বলেতো যা ইচ্ছা, তা করতে পারেন না। এটা পলিটিক্যাল ঝামেলা। উনি ঢাকায় শিফট হওয়ার আগে একটা ঝামেলা করতে চাচ্ছেন।
আরেক অভিযুক্ত মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আমি বিষয়টি কিছুটা শুনেছি, পুরোপুরি অবগত না। আমি ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। ক্যাম্পাসে ফিরে এটা সমাধানের চেষ্টা করবো।
শাহ মাখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, দুই পক্ষের কেউই আমাকে কিছু বলেনি। রাতে ফেসবুকে অপূর্বের পোস্টটা আমি দেখেছি। এখানে একটা পরস্পর বিরোধী বিষয় আছে। এজন্য আমি আজ সকালে হলে গিয়ে বিষয়টা জানার চেষ্টা করেছি। পুরো বিষয়টা এখনো ক্লিয়ার হতে পারিনি। অপূর্ব নিজেও কিছু ঝামেলা করে রেখে গিয়েছে। এখন ও যেভাবে দোষারোপ করছে, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, সেটাও একটা বিষয়। শেষ সময়ে (সাবেক কমিটির) অপূর্ব হলে বহু ঝামেলা করেছে। ওই ঝামেলাগুলোই এখন সমাধান করতে হিমশিম খাওয়ার মত অবস্থা। আমি আজ হলের পশ্চিম হাউজের সকল অনাবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছি সংশ্লিষ্টদের। ফাকা সিটে নতুন শিক্ষার্থী তোলার ব্যবস্থা করবো।
আপনার মতামত লিখুন :