ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

পিছু হটার পর এখন কী করবে ইমরান খানের পিটিআই

আল জাজিরা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ০৩:৫১ পিএম

পিছু হটার পর এখন কী করবে ইমরান খানের পিটিআই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা কারাবন্দী ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকের গাড়িবহর গত সোমবার রাতে রাজধানী ইসলামাবাদের ডি-চক এলাকায় পৌঁছায়। তাঁকে মুক্ত না করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি।

কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে অভিযান চালিয়ে বিক্ষোভকারী কর্মী-সমর্থকদের হটিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। ঘটে হতাহত হওয়ার ঘটনা।

এ অভিযানের আগে ইসলামাবাদের মধ্যাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ডি-চক সেখান থেকে তিন কিলোমিটারের কম দূরত্বে। এখান থেকেই ইসলামাবাদের রেড জোন শুরু। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি ভবনের অবস্থান এ জোনে।

  বুশরা বিবি ছাড়াও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুর অন্ধকারে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরে যেতে বাধ্য হন। পরে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করে। গতকাল বুধবার সকালের মধ্যে পিটিআই এক বিবৃতিতে জানায়, বিক্ষোভ ‘আপাতত’ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পিটিআই নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গাড়িবহর খাইবার পাখতুনখাওয়া থেকে ইসলামাবাদ অভিমুখে গিয়েছিল। রাজধানীতে প্রবেশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ইসলামাবাদে প্রবেশ করে বহর। তাদের দাবি ছিল তিনটি—গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিটিআইয়ের কাছে থেকে ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ ম্যান্ডেট পুনরুদ্ধার, ইমরানসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি ও বিচার বিভাগে নিয়োগের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আনা সংবিধান সংশোধনী বাতিল করা।

এখন বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদ থেকে পিছু হটায় পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতৃত্ব ভীষণ চাপে পড়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, দলটির কোনো দাবি পূরণ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে পিটিআই কীভাবে সংগঠিত হবে, সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

ইমরান খানের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাইঘাম খান আল-জাজিরাকে বলেন, এ বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল পিটিআই। এখন এভাবে বিক্ষোভ ধসে পড়া, দলটির রাজনৈতিক কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

পিটিআইয়ের দাবি, তাদের আটজন সমর্থক বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সরকারের দাবি, বিক্ষোভকারী কেউ নিহত হননি। কর্মকর্তারা বলেন, সোমবার পিটিআইয়ের বহর থেকে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়া হলে তিন রেঞ্জার নিহত হন। আর দলটির সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।

চার মাসের মধ্যে এটা পিটিআইয়ের চতুর্থ বিক্ষোভের ঘটনা। গত অক্টোবরে একটি বিক্ষোভ অঙ্কুরেই থেমে যায়।

খাইবার পাখতুনখাওয়ার মানশেহরা শহরে গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে আলী আমিন গান্দাপুর পিটিআই নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের দমন–পীড়নের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি ইঙ্গিত দেন, দলটি সরকারের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা জানানো অব্যাহত রাখবে।

এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ হিসেবে বলেছিল পিটিআই। এখন এভাবে বিক্ষোভ ধসে পড়া, দলটির রাজনৈতিক কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরান সরকার। এর পর থেকে দলটি একের পর এক বিক্ষোভ করে আসছে। গত ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে পিটিআই প্রার্থীরা বেশির ভাগ আসনে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু দলটি সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। পিটিআই দাবি করছে, তাদের ম্যান্ডেট ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। তাঁকে দুর্নীতি, বিশ্বাসঘাতকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় বুশরা বিবিও নয় মাস জেল খেটেছেন। গত অক্টোবরে জামিন পান তিনি।

এখন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি ইসলামাবাদে অস্থিরতার পেছনে বুশরা বিবিকে দায়ী করেছেন। গত মঙ্গলবার নাকভি অভিযোগ করে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির দায়ভার তাঁর (বুশরা) কাঁধেই বর্তায়।’

দল এখন কী করবে—এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান পিটিআই নেতা সাঈদ জুলফি বুখারি। তিনি বলেন, এখন তাঁর দল হতাহতদের বিষয় সামাল দেওয়ায় মনোযোগ দিয়েছে।

তবে লাহোরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেনজির শাহ বলেন, ইমরান খানের মুক্তির জন্য আরেকটি বড় আকারের বিক্ষোভ শুরু করা এ মুহূর্তে পিটিআইয়ের জন্য প্রশ্নাতীত বলেই মনে হচ্ছে। এ বিশ্লেষক আরও বলেন, পিটিআইকে নিজেদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে। একটি সম্ভাব্য কৌশল হতে পারে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গড়া ও জনপ্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলা। মানবাধিকার ও সামাজিক ইস্যু সামনে রেখে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জাতীর গতি নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে।

পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের দাবি করা হলেও সরকার বারবার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র রানা ঈশান আফজাল বলেন, বিক্ষোভে পিটিআই সমর্থকেরা সশস্ত্র ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুলিশের কাছে বুলেট ছিল। এরপরও তাঁরা হতাহত হয়েছেন। এটা প্রমাণ করে যে পিটিআই সমর্থকেরা অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন।’

 

রানা আফজাল বলেন, এটা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছিল না। তাঁরা (পিটিআই সমর্থকেরা) সহিংসতা করতে চেয়েছিলেন। মানুষের সহানুভূতি আদায়ের কৌশল হিসেবে তাঁরা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

ইসলামাবাদের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহমেদ ইজাজ বলেন, বিক্ষোভস্থল থেকে হঠাৎ এভাবে বুশরা বিবি ও আলী আমিন গান্দাপুরের সরে আসার ঘটনা দলের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করবে।

আহমেদ ইজাজ বলেন, তাঁরা (বুশরা ও গান্দাপুর) যেভাবে ডি-চক এলাকায় সমর্থকদের ফেলে চলে এসেছেন, তা এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে দলের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!