মধ্য-আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে রুয়ান্ডা-সমর্থিত দেশটির জাতিগত তুতসি নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩। সোমবার বিদ্রোহীরা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় সেখানে ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষ হয়েছে।
সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছেন এবং বিভিন্ন কারাগারে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় কয়েক হাজার কারাবন্দি পালিয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আক্রমণ কঙ্গোর খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলের গোমা শহরের হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। কয়েক দশকের পুরোনো এক বিরোধ আঞ্চলিক যুদ্ধ উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
• কী ঘটছে কঙ্গোতে?
দীর্ঘদিন ধরে রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে কঙ্গোর আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সংঘাত চলছে। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা একের পর এক শহরে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। জাতিগত তুতসি-নেতৃত্বাধীন এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমার বেশিরভাগ অংশ দখলে নিয়েছে।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমা দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সোনা, টিন এবং কোল্টানের মতো তুমুল চাহিদার ধাতু ও খনিজ সরবরাহকারী খনির শহরগুলোর সঙ্গে শহরটির যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
• কঙ্গোতে কতদিন ধরে সংঘাত চলছে?
১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার পর থেকে দেশটির খনিজ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত চলছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির বিশাল খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতার জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছে।
কঙ্গোর এই অস্থিতিশীলতা প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এমনকি এই সংঘাতকে কেন্দ্র করে ১৯৯০-এর দশকে ‘‘আফ্রিকার বিশ্বযুদ্ধ’’ হিসেবে অভিহিত দুটি সংঘাতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
• এম২৩ কারা?
২০১২ সালে কঙ্গোর একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শাখা হিসাবে গঠিত হয় এম২৩। ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের তুতসি জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা করার জন্য এই গোষ্ঠীটি গঠন করা হয়; যারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন।
পরে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযান চালিয়ে এই গোষ্ঠীর তৎপরতা দমন করে। এমনকি গোষ্ঠীটির হাজার হাজার সদস্য পালিয়ে প্রতিবেশি রুয়ান্ডায় আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে আবারও হাতে অস্ত্র তুলে নেয় এম২৩ বিদ্রোহীরা।
• রুয়ান্ডার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?
ডিআর কঙ্গো ও জাতিসংঘ বলেছে, এম২৩ বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে রুয়ান্ডা। যদিও রুয়ান্ডা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করে না।
গত বছর জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুয়ান্ডার ৪ হাজার কঙ্গোতে প্রবেশ করেছে এবং এই সৈন্যরা এম২৩ গোষ্ঠীকে সহায়তা করেছে।
রোববার রুয়ান্ডার সরকার এক বিবৃতি দিলেও এম২৩ গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থনের অভিযোগের বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেনি। রুয়ান্ডা বলেছে, সীমান্তের পার্শ্ববর্তী এই সংঘাত রুয়ান্ডার ‘‘সুরক্ষা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য গুরুতর হুমকি’’।
• সংঘাতে অন্য কেউ জড়িত?
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা এম২৩ গোষ্ঠীর অভিযান ঠেকাতে কঙ্গোলিজ সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ডিআর কঙ্গো থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের প্রত্যাহার স্থগিত করা হয়েছে।
আফ্রিকার ১৬টি দেশের আঞ্চলিক জোট সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি) কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করেছে। যদিও এই জোট বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে পারেনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, গোমায় বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়া ঠেকানোর সময় তাদের অন্তত ৯ সৈন্য নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ বলেছে, সংঘাতে মালাবির তিন সেনা নিহত হয়েছেন। উরুগুয়ের সেনাবাহিনী বলেছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত তাদের এক সৈন্যও প্রাণ হারিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি।
আপনার মতামত লিখুন :