একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি অসীম সাহা মারা গেছেন। তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন। মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর ২টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি মারা যান। চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন কবি বদরুল হায়দার।
কবি অসীম সাহা পারকিনসন (হাতকাঁপা রোগ), কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাকে টিউব দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছিল। গত ২১ মে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বদরুল হায়দার জানান, বলছেন, এক সপ্তাহ ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। গত রোববার তাকে সাধারণ বেডে দেওয়া হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা জানান, কাল বুধবার সকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অসীম সাহার মরদেহ বাংলা একাডেমি চত্বরে নেওয়া হবে।
অসীম সাহার শেষকৃত্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তার ছোট ছেলে অর্ঘ্য সাহা জানান, তার বাবা মরদেহ দান করে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গেছেন।
বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য কবি অসীম সাহা ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।
কবি অসীম সাহা ১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় তার মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মাদারীপুর। তার বাবা অখিল বন্ধু সাহা ছিলেন অধ্যাপক। অসীম সাহা ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৬৭ সালে মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।
১৯৬৯ সালে স্নাতক পাস করে তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলন এবং পরে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তার স্নাতকোত্তর পরীক্ষা পিছিয়ে যায় এবং তিনি ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
অসীম সাহার লেখালেখি-জীবনের শুরু ১৯৬৪ সালে। ১৯৬৫ সালে জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপার মধ্য দিয়ে টানা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোরের কবিতা লিখেছেন অসীম সাহা। লেখালেখির পাশাপশি তিনি দেশের মূলধারার পত্রিকাসমূহে সাংবাদিকতাও করেছেন। চলচ্চিত্রে গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা ও টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক হিসেবেও কাজ করেছেন।
কবি অসীম সাহার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৫টি। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো পূর্ব-পৃথিবীর অস্থির জ্যোৎস্নায় (১৯৮২), কালো পালকের নিচে (১৯৮৬), পুনরুদ্ধার (১৯৯২), উদ্বাস্তু (১৯৯৪), মধ্যরাতের প্রতিধ্বনি (২০০১), অন্ধকারে মৃত্যুর উৎসব (২০০৬), মুহূর্তের কবিতা (২০০৬), Refujee and the festival of death in darkness (২০১০), সৌর-রামায়ণ (২০১১), অক্টাভিও পাস ও ডেরেক ওয়ালকটের কবিতা (অনুবাদ) (২০১১), কবর খুঁড়ছে ইমাম (২০১১), প্রেমপদাবলি (২০১১), পুরনো দিনের ঘাসফুল (২০১২) (কবিতা), প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা (১৯৭৬), অগ্নিপুরুষ ডিরোজিও (১৯৯০), উদাসীন দিন (উপন্যাস) (১৯৯২), শ্মশানঘাটের মাটি গল্প (১৯৯৫), কিলের চোটে কাঁঠাল পাকে (২০০২), শেয়ালের ডিগবাজি (২০০৭), হেনরি ডিরোজিও (২০১০) উল্লেখযোগ্য।
শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ এই কবি ও শিল্পী বাংলা একাডেমি সাহিত্যপুরস্কার, আলাওল সাহিত্যপুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কার, রূপসী বাংলা পুরস্কার (পশ্চিমবঙ্গ), কোলকাতা আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার এবং আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্যপুরস্কার, বঙ্গবন্ধু স্মারক-পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :