শীতের কুয়াশার মধ্যেই রাজধানীর বাতাসে ভারি ধূলিকণার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বিশ্বের ১২৪ নগরীর মধ্যে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বায়ুদূষণে দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা। বাতাসের গুণগতমান খারাপ হওয়ায় ঢাকার নাগরিকদের মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা শহরে বায়ুর গুণগতমান মাঝেমধ্যেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় উপনীত হচ্ছে। এমতাবস্থায় জনসাধারণকে ঘরের বাইরে অবস্থানকালে মাস্ক পরিধান করা এবং সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে অবস্থান না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার বায়ুর মান ২৫২। বায়ুর এই মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের অন্য বিভাগীয় শহরের মধ্যে চট্টগ্রামের বায়ুর মান ৯৮, রাজশাহীতে ১৮৪ আর খুলনায় ১৭৫। ঢাকা ও আশপাশের তিন সর্বোচ্চ দূষিত এলাকার মধ্যে আছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস (৫৯৯) গোড়ান (৪৯৫), কল্যাণপুর (৩০৮)। আজ বিশ্বে বায়ুদূষণে ২৫৫ স্কোর নিয়ে প্রথম অবস্থানে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি। ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানমাত্রার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি। বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তা থেকে রক্ষা পেতে আইকিউএয়ারের পরামর্শ, ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
একিউআই শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেই এলাকার বাতাসকে ভালো বলা যায়। ৫১-১০০ হলে বাতাসের মান মডারেট বা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। একিউআই ১০১-১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১-২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০১-৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ পেরিয়ে গেলে সেই বাতাসকে বিপদজ্জনক ধরা হয়।
এর আগে, গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার দূষিত বায়ু থেকে বাঁচতে বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
শীতকালে ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ২০০ এর মধ্যে রাখাটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক। তিনি বলেন, অতীতে শীতের সময়ে সাধারণত বায়ুর একিউআই স্কোর আড়াইশ থেকে তিনশতে চলে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে। এবার আমরা দুইশ’র মধ্যে রাখার চেষ্টা করছি, যদিও এই অবস্থানে রাখাটা খুবই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ।
তিনি বলেন, বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে রাখা একক মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। পরিবহন, ব্যবসায়ী ও শিল্পের সঙ্গে সাধারণ মানুষের অভ্যাসগত বিষয়ও জড়িয়ে আছে। ঢাকার আশপাশের জেলার দূষণও ঢাকায় এসে পড়ছে। পরিবহনের কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে পুরনো গাড়ি তুলে দিতে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এবার খুব বেশি খারাপ হবে না বায়ুর মান। জনগণেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।
দূষণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। এর মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলার জন্য সার্বক্ষণিক ৮টি কাজ করছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে নতুন করে কোনো ইটভাটার অনুমোদন ও পরিবেশ ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ডিসেম্বরের একটি দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। গত বছরের ডিসেম্বরে বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮। ২০১৬ সালের থেকে এত খারাপ কখনোই হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বায়ুর মান ছিল ১৯৫। গত ৯ বছরে ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২১৯ দশমিক ৫৪। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই মান ৩১ ভাগের বেশি বেড়ে গেছে। আর ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ২৬ ভাগের বেশি।
আপনার মতামত লিখুন :