ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

ঈদযাত্রায় যানজট বাধে নাকি বাধানো হয়?

বর্তমান বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৪, ০৫:৩৯ পিএম

ঈদযাত্রায় যানজট বাধে নাকি বাধানো হয়?

ছবি-বর্তমনা বাংলাদেশ

আর একদিন পরই আসছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। চারদিকে চলছে নানান প্রস্তুতি। চলছে কেনাকাটার ধুম। সেই সাথে ঢাকা থেকে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন নাড়ির টানে।

ঈদ মানে আনন্দ, খুশি, আমেজের উৎসব। শত কষ্ট উপেক্ষা করে বছরের দুই ঈদে ঢাকায় অবস্থানরত মানুষগুলো গমন করে আপন নীড়ে। ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করে আপনজনদের সাথে। সত্যিই, আপনজনবিহীন আনন্দে মেলে না পূর্ণতা। আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনজনদের সখ্যতা।

বেশ কয়েক বছর ধরেই ঈদযাত্রায় দেশের বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে। সড়ক-সহাসড়ক ঢেকে যায় যানবাহনের সারিতে । ভয়াবহ যানজটে আনন্দের ঈদযাত্রায় শুরু হয় চরম পর্যায়ের ভোগান্তি। দিশেহারা হয়ে পড়ে যাত্রীরা।

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা, ঢাকা-ময়মনসিংহ; এসব সড়কগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। এমনও হয়, কোনো কোনো সড়কে ৮/১০ ঘণ্টা একই স্থানে আটকা পড়ে থাকে যানবাহন। এক ইঞ্চিও অগ্রসর হয় না সামনে। এমন অবস্থায় অনেক সময় যানজটের উল্লেখযোগ্য কারণই থাকে না বা খুঁজে পাওয়া যায় না।

বছরে দুই ঈদের ঈদযাত্রায় প্রায়ই ৩/৪ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লেগে যায় ১৪/১৫ ঘণ্টা। কখনো কখনো আরও বেশি। সারা দিনরাত সড়কেই অতিবাহিত হওয়ার রেকর্ডও আছে অনেকের। এমনকি সড়কে ঈদ উদযাপন করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে অনেকের।

কর্মব্যস্ত প্রায় লোকের ঈদে ছুটি হয়ে থাকে সাধারণত ৫ থেকে ১০ দিন। বাড়িতে যাওয়া-আসায় রাস্তাতেই যদি কাটাতে হয় ২-৩ দিন কিংবা রাস্তাতেই যদি ঈদ করতে হয় তাহলে ঈদ আর ঈদ থাকলো কোথায়?

ঈদযাত্রার যানজট, যাত্রীদের ভোগান্তি; এর শেষ কোথায়? কোন পথে এর সমাধান? যানজট নিরসন বা নিয়ন্ত্রণ কি আদৌ সম্ভব? এটা কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, অবহেলা নাকি অক্ষমতা? এসব অনেক প্রশ্নই ঘুরঘুর করে জনমনে।

যানজট সমাধানের আলোচনার আগে নিজের একটু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। আমি ময়মনসিংহের বাসিন্দা। থাকি ময়মনসিংহেই। গত দুই বছর আগের কথা। বিশেষ প্রয়োজনে ঈদের একদিন আগে গিয়েছিলাম ঢাকায়। ফেরার পথে ভোগান্তির শিকার হয়েছি চরম পর্যায়ের। বিরক্তিকর এক অভিজ্ঞতা!

বিকেল তিনটায় খিলক্ষেত থেকে প্রাইভেট কারে উঠি ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে। বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা, তারপর রাত, এরপর মধ্যরাত পার হয়ে শেষ রাতের আগে মুহূর্তে পৌঁছি ময়মনসিংহে। রাস্তা মাত্র ১১০ কিলোমিটারের মতো। স্বাভাবিকভাবে সর্বোচ্চ আড়াই-তিন ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্ত প্রায় ১২ ঘণ্টা লাড়াই করেছি যানজটের সঙ্গে। সেদিন নিজ চোখে দেখেছি ভয়ঙ্কর যানজটের অতি তুচ্ছ কারণ। খুবই হতাশ হয়েছি যানজট নিয়ন্ত্রণে দেশের উদাসীন কার্যক্রমের প্রতি।

গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের বাইপাস পর্যন্ত রাস্তায় কোনো ক্রসিং নেই। পর্যাপ্ত বড় রাস্তা, ফোরলেন। সাধারণত যানজটের কোনো কারণ নেই। তবুও সারা রাস্তাতেই ছিল যানজট। কিন্ত কেন? কারণ খুঁজতে গিয়ে আমি দেখলাম, এর প্রধান কারণ অতি সামান্যই।

ছোট ছোট স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের উঠানামা করাতে পাবলিক গাড়িগুলোকে দাঁড় করানো হচ্ছে রাস্তার মাঝখানে। ফলে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। যানবাহন বেশি থাকায় দুই/তিন মিনিটেই তৈরি হচ্ছে লম্বা গাড়ির সিরিয়াল। প্রতিটি স্ট্যান্ডে একই অবস্থা। প্রায় প্রতিটি গাড়িই কিছুক্ষণের জন্য আটকে দিচ্ছে যান চলাচল। ধীরে ধীরে পুরো রাস্তাতেই যানজট ছড়িয়ে পড়ছে।

পেছনের গাড়ি যেন ওভারটেক করতে না পারে এজন্য অধিকাংশ গাড়ি ইচ্ছা করেই রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ায়। গাড়ির মাথাটা একটু বাকা করে দেয় যাতে পুরা রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। আসলে যানজটের অন্যতম মূল হোতা হল এরা। যানজট হঠাৎ করে বেধে যায় না, বরং এরাই ইচ্ছাকৃত বাধায়। কিন্ত দুঃখের বিষয় হল, এসবে বিশেষ কোনো নজরদারি খুঁজে পেলাম না।

আমার পর্যবেক্ষণ হল, ঈদযাত্রায় দেশের প্রতিটি সড়কে যদি এই একটি বিষয়ের প্রতি নজরদারি করা হয়, তাহলে আশা করা যায় ৭০% যানজট নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট নির্ধারিত স্থানে গাড়ি থামাতে হবে। এক সেকেন্ডের জন্যও রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করা যাবে না। এরকম হলে সাথে সাথে একশন। কঠিন পদক্ষেপ।

আরও লক্ষণীয়, রাস্তার মোড়গুলো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। রাস্তার উপর বাস-ট্রাক পার্কিং করে বা দোকান-বসিয়ে রাস্তার প্রশস্ততা ক্ষুণ্ন না করা। তাহলে যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবো আমরা।

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, যানজট হওয়ার কারণ, বাসস্ট্যান্ড-বাস কাউন্টার থাকা, যাত্রী ওঠানামা, মহাসড়কের পাশে বাজার, ইউ টার্ন থাকা, টোল আদায়ে ধীরগতি, রাস্তা দিয়ে পথচারী পারাপার, ওজন মাপা এবং সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ চলমান থাকার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়।

গত দুইদিন আগে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন ঈদযাত্রায় ঈদের আগে ও পরবর্তী সময়ে উল্লেখিত বিষয়গুলো তদারকির আওতায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঈদযাত্রার যানজট নিরসনে কেবল সভা-সেমিনার ও নির্দেশনা প্রদান নয়, প্রয়োজন কার্যকরী পদক্ষেপ। কঠিন নজরদারি। এটা সম্ভবও বটে। যানজট মুক্ত হোক এবারের ঈদযাত্রা। ভোগান্তিমুক্ত হোক ঈদ আনন্দ। আর ঈদ হোক সবার জন্য খুশির আমেজ।

লেখক: মাহফুজ হোসাইনী। তিনি একাধারে আলেম, লেখক ও সাংবাদিক।

 

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!