ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে দূর্গা পূজার উৎসব উদযাপন করুন:তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম

নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে দূর্গা পূজার উৎসব উদযাপন করুন:তারেক রহমান

ছবি- বর্তমান বাংলাদেশ।

‘ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার’ মন্তব্য হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্ভয়ে দূর্গা পূজার উৎসব পালনের আহ্ববান জানিয়েছেন তারেক রহমান।

শুক্রবার বিকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্মানে এক শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করে সকলকে দূর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘এই বাংলাদেশ আপনার-আমার, আমাদের সবার। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সকল ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবে এটাই বিএনপির নীতি এটাই বিএনপির রাজনীতি।”

‘‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দল বিএনপি বিশ্বাস করে দলমত ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার।”

তারেক রহমান বলেন, ‘‘আগামী মাসেই আপনাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা। এই উৎসর উপলক্ষে আমি আপনাদেরকে আগাম শুভেচ্ছা জানাই। ইনশাল্লাহ আপনারা প্রত্যেকে উৎসব উদযাপন করুন নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে।” 

শুক্রবার বিকলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠিত জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সন্মানে এই শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সারা দেশ থেকে কয়েক‘শ হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।

‘আমরা বাংলাদেশী’

তারেক বলেন, ‘‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্র ছিলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার।ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী বলুন আর অবিশ্বাসী বলুন কিংবা সংস্কারবাদী প্রত্যেকটি নাগরিক রাষ্ট্র বা সমাজে যার যার ধর্মীয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক,সামাজিক অধিকারগুলো স্বচ্ছন্দে বিনাবাধায় উপভোগ করবে এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা লাখো প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন।”

‘‘ কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খৃষ্টান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিলো না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশী।”

 ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা : সুষ্ঠু ভোটের বিকল্প নেই’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ… গত ১৫ বছরে যা হয়েছে আপনারা দেখেছেন। সারাদেশে আইনের শাসন ছিলো না বলেই কিন্তু প্রধান বিচারপতি হয়েও এসকে সিনহাকে অবিচারের শিকার হতে হয়েছিলো। পলাতক স্বৈরাচারের আমলে আদালত আর আয়নাঘর একাকার হয়ে গিয়েছিলো। সুতরাং সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগরু দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকটা নাগরিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্র ও সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।”

‘‘আমি মনে করি নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় প্রত্যেকটি নাগরিকের ভোটের অধিকার একটি কার্যকরী শক্তিশালী অস্ত্র।যতদিন পর্যন্ত মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান অর্থা দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে জনগনের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারবেন, ততদিন পর্যন্ত কোনো নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষিত নয়।”

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি পাশাপাশি হিন্দু, মুসলমান,বৌদ্ধ, খৃষ্টান দাঁড়িয়ে। এখন আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতার কথা বলছি আমরা…. সেটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। এখানে যারা চক্রান্ত করছে আবার সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।”

‘‘ কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খৃষ্টান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের এমন কোনো জিজ্ঞাসা কিন্তু ছিলো না। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু এসব নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী কিংবা সংস্কারবাদী প্রতিটি নাগরিকের একমাত্র পরিচয় আমরা বাংলাদেশী।”

‘চক্রান্ত রুখতে হবে’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে সকলকে নিয়ে রাজনীতি করা। আমাদের যে একটা ভয়াবহ দানবকে একটা অবিশ্বাস্য বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছি…. তারপরে এই বিপ্লবে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র হয়েছে, চক্রান্ত হয়েছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এবং দূঃখজনকভাবে আপনাদেরকে এর ভেতরে ফেলে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।”

‘‘যেটা আমরা সবসময় আপত্তি জানিয়েছি। ইন্ডিয়ার জার্ণালিস্ট এসেছিলো দলে দলে… সবাইকে একটা কথা আমরা বলেছি যে, এই পরিবর্তনের ফলে যেটুকু ঘটেছে সেটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক সেটা কোনো সাম্প্রদায়িক নয়। আজকে আবার একই চক্রান্ত শুরু হয়েছে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে। দেখুন এগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবেন না। আজকে সেখানে একইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে…এটা কিন্তু আমাদের অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।আসুন আমরা ভবিষ্যতে যেন একটি রেইনবো নেশন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তারেক রহমানের নেতৃত্বে সেই পথে আমরা এগিয়ে যাই।”

বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তপন দে‘র যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের্ উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান কল্যানের চেয়ারম্যান বিজন কান্তি সরকার, ফেনীর কামাক্ষা চন্দ, খাগড়াছড়ির অজয় সেনগুপ্ত, সাভারের উত্তম ঘোষ, খুলনার সুজনা জলি, বরিশালের সঞ্জয় গুপ্ত, অবসরপ্রাপ্ত টিভি প্রযোজক মনোজ সেন গুপ্ত, গৌড় সিনহা প্র্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

ইসকানের চারু চন্দ্র্র দাস ব্রক্ষচারী, চট্টগ্রাম অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস গোস্বামী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, গুলশান পূজা কমিটির জেএল ভৌমিক, পান্না লাল দত্ত, হিন্দু মহাজোটের সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের নির্মল রোজারিও প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা জয়ন্তু কুমার কন্ড, আবদুল বারী ড্যানি, অর্পনা রায়, রমেশ দত্ত, দেবাশীষ রায় মধু, সুশীল বড়ুয়া, জনগোমেজ, মিল্টন বৈদ্যসহ কেন্দ্রীয় এবং হিন্দু,বৌদ্ধ, খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!