বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক গণআন্দোলনে বিএনপির ভূমিকাকে খাটো করা যাবে না।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ৮৭৫ জন শহীদের মধ্যে ৪২২ জনই বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ১৬ বছরের স্বৈর শাসনের অবসান ঘটিয়ে এবং গণতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করে বাংলাদেশের মানুষ ৫ আগস্ট আবারও স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, `এই আন্দোলন হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটা ছিল বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নিপীড়ন, দমন ও তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বিএনপির দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। এখানে বিএনপির অবদানকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার ত্যাগ স্বীকার করে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে অবদান রেখেছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৩ আগস্ট পর্যন্ত `জুলাই গণহত্যায়` সারা বাংলাদেশে ৮৭৫ জন শহীদ হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিএনপির নেতাকর্মী, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি দলের স্থায়ী রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
তিনি দাবি করেন, আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা বিএনপির লক্ষ্য নয়। বরং সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই উদ্দেশ্য ছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, `দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার সব সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনকে নিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এবং গণঅভ্যুত্থানে প্রেরণা যুগিয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেছে।
ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বিএনপির ৬০ লাখ সদস্যকে। তারাই রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢালের মতো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের জন্য জনগণের সংগ্রামে যোগ দেয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পোশাক শ্রমিক, রিকশাচালক, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক নির্বিশেষে বামপন্থী বা ডানপন্থী মতাদর্শের ব্যক্তি যেই হোন না কেন তাদের সবার মূল্য সমান। `প্রতিটি রক্তবিন্দু সমান সম্মান পাওয়ার যোগ্য।`
সুতরাং হত্যার প্রতিটি ঘটনাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে নথিভুক্ত করতে হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে জাতীয় ঐকমত্য হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি; এটি অবৈধ সরকারের জুলুম, অন্যায়, দুর্নীতি, দুঃশাসন, বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত জনরোষের বহিঃপ্রকাশ।
আপনার মতামত লিখুন :