ঢাকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারে দলীয় রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এই রূপরেখার আলোক বিএনপির পক্ষ থেকে জাতির উদ্দেশে বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যদিও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রতিবদ্ধ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এর অন্তর্ভুক্তি সূচকে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ১০০-তে পেয়েছিলো ৫২। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের নিচে ছিল শুধু পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, বিএনপির ক্ষমতায় গেলে ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এই নীতির ভিত্তিতে উন্নত কল্যাণকামী রাষ্ট্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার আলোকে সকলের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দারিদ্র্য বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করা হবে। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ এর কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ পল্লী স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা এবং গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার আলোচনায় প্রায়শই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের অধীনে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের বিবেচনায় রেখে সকল পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নীতিমালা প্রণীত হয়, ফলে দেশে বিদ্যমান প্রচলিত ও ঐতিহ্যবাহী ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি চিকিৎসা ব্যবস্থার অস্তিত্ব উপেক্ষিত হয়। ফলে অতীতের প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা ও বিবিধ সহায়তা প্রদান সমান গুরুত্বপূর্ণ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিগত আওয়ামী শাসনকালে স্বাস্থ্যখাতে আর্থিক দুর্নীতি, অনিয়মসহ পদোন্নতি, বদলি, প্রশাসনিক দুর্বিত্তায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধনের সাথে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দলীয়করণের আবরণে আচ্ছাদিত করা হয়েছে ৷ ফলে স্বাস্থ্য সেবায় জনগণের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি বঞ্চিত হয়েছে, সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তীব্র বিদেশ মুখিতা সৃষ্টি হয়েছে, চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কের হয়েছে অবনতি, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হয়ে পড়েছে অনিরাপদ, সরকারি স্বাস্থ্য সেবার অধিক্ষেত্রে জনগণ উচ্চ মূল্যের বেসরকারি চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কারে বেশ কিছু স্বল্প মেয়াদি প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে ইউনিয়ন সাব সেন্টার উন্নয়ন ও পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী’ নিয়োগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন, জিপি (জেনারেল ফিজিশিয়ান) অধীনে প্রত্যেক নাগরিককে একজন সরকারি রেজিস্টার্ড চিকিৎিসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিদ্যমান দ্বিতীয় (জেলা ও সদর হাসপাতাল) এবং তৃতীয় স্তরের বিষেশায়িত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ, স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায় বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারীর জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্ক উন্নয়নের কার্যকর ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও মিডিয়ার যথাযথ এবং ইতিবাচক ব্যবহার।
মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তাবনা তুলে ধরে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য কার্ড প্রবর্তন ও স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা প্রবর্তন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগীতা সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণে স্বক্ষম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং স্বাস্থ্য পর্যটন উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যপরিকাঠামো নির্মাণ।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের জন্য ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রোগ্রামের সূচনা, প্রস্তাবনা অথবা এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য তথ্য এনআইডি কার্ড সংযোজন করা। এই উন্নতর কার্ডের প্রধান উদ্দেশ্য হবে জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় প্রবেশাধিকার সহজ করা এবং তাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ সহায়তা করা। প্রতিটি নাগরিকের এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি সাপেক্ষে এটি প্রদান করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে সয়ংক্রিয়ভাবে হালনাগাদ করা।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সকল ক্ষেত্রেই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ক্রমাগত বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন ও পরিশীলনের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী ও প্রয়োগযোগ্যভাবে বাস্তবায়নই সফলতার মূল কথা। এই বিবেচনায় উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবটি একটি ধারণাগত কাঠামো। চলমানভাবে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক পর্যালোচনা, অংশীজনের চাহিদা ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব জনকল্যাণে কার্যকরভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

তিনি বলেন, জনকল্যাণমুখী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সকলের মতামতকে পুনঃমর্যদা দেওয়ার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জনগণের কল্যাণে স্বাস্থ্যসংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!