ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

নাবালক ছাত্র হলো বিএনপির ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্য

বর্তমান বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম

নাবালক ছাত্র হলো বিএনপির ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্য

মাহির আসিফ অর্পণ। গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার ফকিরহাট শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে সদ্য ফল প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। জানতে চাইলে ফকিরহাট শহীদ স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম বলেন, "মাহির আসিফ অর্পণ এ বছরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তার বাবা নাকাইহাট কলেজের সহকারী অধ্যাপক।"

উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে যেখানে পড়াশোনার প্রতি আরও গভীর মনোযোগ দেওয়ার কথা, সেখানে এই অল্প বয়সেই ওয়ার্ড বিএনপির পদ পেয়ে ‍‍`আলাদিনের চেরাগ‍‍` পেয়ে গেছেন তিনি! বনে গেছেন পৌর বিএনপির ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কার্যকরী নির্বাহী কমিটির সদস্য। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার জ্ঞান চর্চা না থাকলে এমন পদে আসায় দল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় ত্যাগী নেতারা। তার এমন পদ পাওয়ায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তবো নীরব রয়েছে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কয়েক নেতার অনৈতিক পন্থায় এমন পদ পেয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন উপলক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয় প্রতিটি ওয়ার্ড কমিটি। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এই গঠন করা হলেও এতোদিন আলোরমুখ দেখেনি কমিটি। প্রকাশিত কমিটি দেখে পৌর বিএনপির ত্যাগী ও সম্ভাবনাময় নেতা কর্মীদের হতভম্ব হয়ে পড়ে। দেখা যায়, পৌর বিএনপির ৫ নং ওয়ার্ড কমিটিতে স্থান পেয়েছে একজন নাবালক ছাত্র। ভুলে ভরা আরোও অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে এই কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে। অভিযোগ আছে, গঠনতন্ত্রের ৭১ সদস্যের কমিটির কথা থাকলেও করা হয়েছে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। 

গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মামলা, হামলা, নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন এসব নেতাকর্মীরা। জীবন বাঁচানোর ভয়ে আত্মগোপনে থেকেও লড়াকু সৈনিকদের মতে দলীয় বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহন করেছেন তারা। ফ্যাসিবাদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ১৬ বছর এমন আত্মত্যাগের পরও যোগ্যতা অনুযায়ী পদ না পাওয়ায় হিংসাত্মক এবং সুবিধা ভোগের তৎপরতা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন নেতা। ফলে এমন পরিস্থিতিতে পৌর বিএনপি উত্তেজনার শঙ্কা করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, "যোগ্যতা অনুযায়ী পদ পাচ্ছেন না স্থানীয় বিএনপি নেতারা। একজন শিক্ষার্থীকে ওয়ার্ড বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য করায় প্রমাণ স্পষ্ট কিছু সুবিধাভোগী মানুষ বিএনপিকে ব্যবহার করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সঙ্গে নিয়ে অনৈতিক পন্থায় ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে মাইনাস রাজনীতি শুরু করেছেন। এমন চলতে থাকলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে৷ তাই এখনই সময় এমন সুবিধাবাদী মানুষদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা।"

আরেক নেতা বলেন, "আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে ত্যাগী নেতারা ছাড়া কাউকে দেখা যেতো না। তবে বর্তমানে পৌর বিএনপির ওয়ার্ড কমিটিতে যারা পদে আছে তাদের অধিকাংশই ত্যাগী না। মাইনাস রাজনীতির মাধ্যমে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী কিভাবে ওয়ার্ড নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। সেখানে তো অনেক ত্যাগী নেতারা আছেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে কমিটির সময় মাহির একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। এটা বিএনপির নেতা কর্মী সমর্থকদের সাথে কৌতুক করার শামিল।‍‍`

মাহির ও জাহাঙ্গীর হয়তো জানেই না মাহিরকে সদস্য করা হয়েছে। পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিব মিলে একজন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীকে কাউন্সিলে অংশ করার সুযোগ না দেওয়ায় জন্য এই চক্রান্ত করেছেন বলে তিনি মনে করেন।

যারা গত ১৬ বছরে বিএনপি করার কারণে ঘরছাড়া থাকতে হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এখানে অবশ্যই পৌর আহ্বায়ক কমিটিকে বিষয়টি দেখতে হবে। তার সদস্যভূক্তিই প্রমাণ করে এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও ষড়যন্ত্র চক্রান্তের অংশ।"

তথ্য বলছে, মাহির আসিফ অর্পণ পৌর ৫ নং নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের বড় ছেলে। বাবা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হওয়ার সুবাধে ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করে ছেলেকে পদ দিয়েছেন তিনি। ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করলেও সবার কাছে তিনি নিজেকে ভালো মানুষ রূপান্তরে চেষ্টা করেন। 

এ বিষয়ে জানতে মাহির আসিফ অর্পণের বাবা এবং ৫ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

একটি সূত্র বলছে, ক্ষমতার দাম্ভিকতায় ছেলেকে ওয়ার্ড বিএনপির পদে বসিয়ে স্থানী ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে যে প্রতারণা করা হয়েছে, তাতে টনক নড়েনি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির। নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলেও আহ্বায়ক কমিটির নিরবতা প্রমাণ করে তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। প্রশ্ন উঠে যোগ্যতা নিয়ে। আদৌ স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন পাবেন? এমন প্রশ্ন এখন সবখানেই।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আবু জাফর লেলিন বলেন, "আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। একজন মানুষ এসব কাজ করেতছে। তাকে খুব ভালো মনে করতাম। কিন্তু সে এসব কিছু করছে।"

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!