বিকেলের আলো দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।অনবরত আলো ছড়িয়ে ডুবছে দিনের সূর্য।পশ্চিমের আকাশে ছড়িয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত লাল রক্তিম আভা; ঠিক আমাদের বাড়ির পেছনে লাল টুকটুকে শিমুল ফুলগুলোর মতো। সে আভার ছটা যেন পত্রপল্লবের মতো লেগেছে সবার চোখেমুখে।চারদিকে হৈ-হুল্লোড়। বইছে খুশীর জোয়ার। আনন্দের ছড়াছড়ি। কাল ঈদ।
বিলাই কান্দরে তখন আলোঝরা বিকেল। সেখানে নতুন চাঁদ দেখবো। তাই অপেক্ষা। আমি, সোহেল ভাই, রেজ্জাক, আতাউর, তশিরুল, এরশাদ, সাইদা, লাভলী আর গোলাপি আপা- আমাদের সবার চোখ তখন পশ্চিমের আকাশে। অবশেষে কালুয়ানীর ভিটার বাঁশঝাড়ের উপরে ছোট ধনুকের মতন কি একটা দেখা গেল। লাভলী আপা সবার আগে সালাম দিয়ে বললো - ওইটাই ঈদের চাঁদ। সবাই সালাম দে - চাঁদকে।
আমরা কপালের উপরে হাত উঠিয়ে স্যালুট ভঙ্গিমায় চাঁদ মামাকে সালাম দিয়ে এক দৌড়ে বাড়ি ফিরলাম।
ততক্ষণে মিস্টি আব্বার রেডিওতে শুরু হয়েছে -ও মন রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশীর ঈদ.. দারুণ শিহরণ খেলে গেল নিমিষেই। সবাই গোল হয়ে ঈদের গান শুনছি। মিস্টি আব্বার হাতে মদীনা মার্কা আতর। তিনি একে একে সবাইকে ডেকে আতর লাগিয়ে দিচ্ছেন।
খানিক বাদে আম্মার সেমাই ভাজার গন্ধ নাকে আসে ।ছুটে যাই রান্নাঘরে।মুচমুচে সেমাই খাই একটু। পাশেই বুটের হালুয়া ট্রেতে রেখে চাকু দিয়ে কাটছে মেজো ভাইয়া।সেটা দারুণ শৈল্পিক ব্যাপার। বুটের হালুয়া থেকে খাঁটি ঘিয়ের সুঘ্রাণ পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি সে গন্ধে কিছুটা মাতোয়ারা।
আব্বার নাকে মোটা ফ্রেমের কালো চশমা। টেবিলে বসে কি সব হিসেব করছেন গভীর মনোযোগ সমেত। লাহিড়ী হাট থেকে ঈদের বাজার করে ফিরেছেন একটু আগে।
খানিক বাদে মসজিদের মাইকে ঘোষণা এলো- আগামীকাল ০৮.০০ টায় ঈদের জামাত। সবাইকে যথাসময়ে ঈদগা মাঠে থাকার জন্য অনুরোধ করা হল। আব্বা হাসলেন।আম্মার উদ্দেশ্যে বললেন- ঘোষণার সাথে তো টাইমের মিল থাকেনা কোনবারেই।
আম্মার সব কাজ শেষ।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাত কত মনে নেই। আমি আব্বাকে ধরে শুয়ে আছি। আম্মাকে ডেকে আব্বা বলছেন - `রুবি এবার তো তোমার জন্য শাড়ি কেনা হলোনা,ওদের সবার জন্য কিনতে কিনতে টাকা ফুরিয়ে গেল` আম্মা কোনরকম পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গীতে বললেন - প্রতিবছর কি নতুন জামা-কাপড় কিনতে হবে?আমারটা বাদ দাও। তুমি তো একটা পাঞ্জাবি কিনতে পারতে। আব্বা মৃদুস্বরে বললেন-
`এটা আরেকটু পুরাতন হোক, সামনেবার কিনবো `
আব্বা-আম্মার নতুন-পুরাতনের গল্প শুনতে শুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। কাল ঈদ। খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠতে হবে তো.....।
লেখক: হাফিজুর রহমান রিয়েল, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক গুলশান বিভাগ(ডিএমপি)।
আপনার মতামত লিখুন :