তীব্র রোদ ও তাপদাহের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দেশ। এর মধ্যে হিট স্ট্রোকে মারা গেছে আট জন। তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাছ লাগানোর কথা বলছেন সরকার।
ঠিক সেই মুহুর্তে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল থেকে বিপুল পরিমান গাছ কাটার খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, এই বিলে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা সান্দিড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে। এই রাস্তার ধারে রয়েছে সাড়ি সাড়ি বনজ গাছ। যে গাছ গুলো কেটে ফেলছে বনবিভাগ। আর এতেই চাপা ক্ষোপ দেখা দিয়েছে স্থানীয়সহ ভ্রমন পিপাসুদের মাঝে।
আদমদীঘি বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন- তারা নিয়ম মেনেই গাছ কেটেছেন। সমিতির নিয়ম অনুয়ায়ি প্রতি ১০ বছর পর পর গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে।সেজন্য কেটে ফেলা হয়েছে।
বন বিভাগের এমন মন্তব্যে পরিবেশবিদরা বলছেন, নিয়ম থাকলেও এই তাপদাহের সময় গাছ কাটাটা কতটা যুক্তিক বোধগম্য নয়। চাইলে কয়েকটা দিন পর কাটা যেতো।
দেখা যায়, মাঠে ধান কাটার পাশাপাশি বিলে মাছ ধরছে কৃষক ও জেলেরা। মাথার উপর কাক ডাকে রোদে দিশেহারা শ্রমিকরা কিছুটা গরম নিতে আসে গাছের ছায়াতলে। আবার ক্লান্ত কৃষক ও জেলেরা সড়ক ও বিলের পাশের সাড়ি সাড়ি গাছের ছায়াতে বসে একটু জিড়িয়ে নিচ্ছে। আবার বিশেষ উৎসবগুলোতে এই সড়ক ও বিলপাড় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণিত হয়। তবে এখন থেকে আর এই সড়কের পাশে দেখা যাবে না দাড়িঁয়ে থাকা সবুজ বনালি।
স্থানীয়রা বলছে- বিলের পাড় ও রাস্তা ধারের সড়কে এসব গাছ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে প্রায় ২০ বছর ধরে। সড়কে ছায়া দেওয়া এসব গাছ কাটার বিরোধিতা করছেন স্থানীয়রা। কিন্তু বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মমাফিক এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া গ্রাম থেকে রক্তদহ বিল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি সড়কের পাশ ও বিল পাড় দিয়ে প্রায় ১২শ গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কাটা হয়েছে প্রায় চার থেকে পাঁচশতটি গাছ। গাছগুলোর বেশিরভাগই বনজ গাছ।
স্থানীয় বাসিন্দা আছর আলী নামের এক কৃষক বলেন, বন বিভাগ থেকে গাছ কাটছে কাটুক তবে দেখে শুনে বেশি বয়সী গাছ ও মারা যাওয়া গাছ কাটুক। আবার নতুন নতুন গাছ লাগাবে। তবে একবারে সব গাছ কাটায় আমাদের কৃষকদের অসুবিধা আবার এই গরমে গাছের ছায়া ও বাতাসে আমরা স্বত্বী পেতাম।
সান্দিড়া গ্রামের এক জেলে কাদের আলী নামের এক জেলে বলেন, এখানে সরকারি গাছগুলো সব কাটা হচ্ছে তবে কোনো গাছ লাগানো হচ্ছে না। আদৌ এখানে কোনো গাছ লাগানো হবে কিনা তার ঠিক নেই। এই গাছগুলো কাটায় আমাদের সব পেশার লোকদেরই অসুবিধা হচ্ছে। এই বিল ও বিলের আশেপাশে প্রায় কয়েকশ কৃষক, জেলে প্রতিদিন কাজ করে যারা এই সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় এসে একটু জিড়িয়ে নেয়। গাছ কাটার ফলে রোদের কারণে আমাদের কাজ করতেও অসুবিধা হচ্ছে।
তাহমিদ নাফিস দিপ্ত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ এটি আমাদের সকলেরই জানা। সান্তাহারের সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি এই রক্তদহ বিল পার। তীব্র গরমেও এখানে ছায়া, বাতাস থাকতো সামনে অথৈ পানি। আর এই সৌন্দর্য আরও বুদ্ধি পায় সড়ক ও বিল পাড়ের গাছের কারণে। সেখানে সব গাছ কেটে ফেলে এই এই সৌন্দর্য নষ্ট করছে বন বিভাগ।
সবুজ আন্দোলন নামের পরিবেশবাদী সংগঠনের আদমদীঘি উপজেলার সাধারণ সম্পাদক সাগর খান বলেন, বন বিভাগ গাছ কাটবে আবার গাছ লাগাবে। কিন্তু এরা গাছ কাটে রোপণ করে না। এই গাছগুলো একবারে না কেটে কয়েক পর্যায় ক্রমে কাটতে পারতো। এত নতুন গাছ রোপণ করে আবারও পর্যায় ক্রমে আগের গাছ কাটলে পরিবেশ সৌন্দর্য দ্টুই রক্ষা পেত।
একই সংগঠনের উপজেলার সভাপতি গোলাম রব্বানী দুলাল বলেন, পরিবেশ রক্ষায় নিয়মমাফিক গাছ কেটে নতুন গাছ রোপণ করতে হবে। কিন্তু বনবিভাগ থেকে এর আগেও উপজেলার নওগাঁ-বগুড়া মহাসড়কের পাশ থেকে কাটা হয়েছে হাজার হাজার গাছ। পরবর্তীতে এইসব গাছ লাগানোর কথা থাকলেও দুই বছর পার হলেও একটি গাছও রোপণ করেনি বন বিভাগ। বন বিভাগ গাছ কেটেই চলছে তবে লাগাচ্ছে না একটি গাছও।
এ বিষয়ে আদমদীঘি বন বিভাগের ফরেস্টার মতিউর রহমান বলেন, সমিতির নিয়ম অনুয়ায়ি প্রতি ১০ বছর পর পর গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। এবং নতুন করে আবার গাছ লাগাতে হবে। তবে এই গাছগুলো ২০ বছর আগের যার কারণে গাছগুলো রাখার আর সুযোগ নেই। আমারা গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কাটছি। পরবর্তীতে আমরা আবারও এই সড়কের পাশ দিয়ে গাছ রোপণ করবো।
আপনার মতামত লিখুন :