হুমকির মুখে পড়েছে ঝিনাইদহের জনস্বাস্থ্য। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকূপেও। জেলার ৬টি উপজেলায় হাজার হাজার নলকূপ পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে। কিছু কিছু জায়গাতে পানি মিললেও চলতি মাসের শুরু থেকে ক্রমেই পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে নলকূপগুলো। সুপেয় পানির হাহাকার ঠেকাতে বৃষ্টির পানির অপেক্ষা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের। তারা বলছে তাদের ডিজাইন অনুসারে টিউবওয়েল না বসালে প্রত্যেক শুষ্ক মৌসুমে এটি ঘটতেই থাকবে। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছে বৃদ্ধি করতে হবে গভীর নলকুপের সংখ্যা, খনন করতে হবে নদ-নদী ।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মামুন জানান,পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলি ক্রমেই মৃত আর গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে নলকূপগুলি পানিশূন্য হয়ে যাচ্ছে । দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা ঝিনাইদহে ১মাসের বেশী সময় ধরে বৃষ্টিও নেই ফলে ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে।যদিও তাপমাত্রা আস্তে আস্তে কমছে,স্বস্তি আসতে পারে জনজীবনে।
একই গ্রামের সাইমুম মিয়া জানান,তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির,গ্রামাঞ্চলে প্রত্যেক বাড়ির নলকূপ অকেজো হতে চলেছে। ফলে রান্না-বাড়া সহ ঘর-গৃহস্থালীর কাজে মারাত্মক অচলাবস্থা চলছে। শুধু গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে নয় পানি নেই। হাট-বাজার, মাঠ-ঘাটের সব জায়গাতেই একই অবস্থা। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ডায়রিয়া সহ বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকি।
শৈলকুপা উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসিফ আলম জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৪ফুট মাটির নীচে পানির লেয়ার বা স্তর পাওয়া যায় কিন্তু এখন নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে ২৮ থেকে ৩২ ফুট নীচে পানির লেয়ার মিলছে।
ঝিনাইদহ জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান,এমন পরিস্থিতিতে অনেক সামর্থবান মানুষ মাটখুঁড়ে তাদের নলকূপের নীচে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিন চালিত জলমটর বা সাবমার্সেল পাম্প বা এজাতীয় মটর স্থাপন করে নলকূপের পানি সচল রাখছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গত ৫ বছরে প্রতি ইউনিয়নে ৮০ টি করে সাবমার্সেল পাম্প স্থাপন করছে, ৬০ হাজার পরিবার পানি পাচ্ছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির বাহিওে নলকুপ স্থাপন করলে পানি পাওয়া সমস্যা গ্রীষ্ম বা শুকনা মৌসুমে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান,জরুরী ভিত্তিতে আরোও গভীর নলকুপ স্থাপন করতে হবে। এছাড়া নদনদী খনন করলে পানির স্তর মিলবে ।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহে প্রায় ১৮লাখ মানুষের বসবাস, সরকারী হিসাবে জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অ-গভীর নলকুপ রয়েছে । তবে ব্যাক্তি উদ্যোগে আরো ৫০ হাজারের বেশী নলকুপ রয়েছে যার বেশীরভাগ পানিশূণ্য।
জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে, জেলাজুড়ে কত হাজার বে-সরকারী বা ব্যাক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা তার কোন পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারীভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকূপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যাতে ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়।
আপনার মতামত লিখুন :