ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫

অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ; গ্রুপে বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ

বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক ( নওগাঁ)

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০১:১২ এএম

অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ; গ্রুপে বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ

ছবি-বর্তমান বাংলাদেশ।

নওগাঁয় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) খন্ডকালীন গভীর নলক‚পের অপারেটর নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বোর্ডে ফলাফল টাঙানো পর থেকেই এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। 


বলা হয়েছে, এ নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। ফলে অভিযোগ উঠেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মুখ দেখে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।  


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ তুলেছেন প্রতিবাদের ঝড়। আবার কেউবা করেছেন লিখিত অভিযোগ। 


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম মেনে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে অপারেটর নিয়োগের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি, অভিযোগ পেলে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।

 

অপরদিকে বর্তমানে রাজনৈতিক দলের একাধিক গ্রুপের কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগ নিয়ে বেকায়দায় আছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলার বরেন্দ্র অফিস দুই ভাগে বিভক্ত। নওগাঁ-১ অফিস শহরে অবস্থিত এবং নওগাঁ-২ অফিস পতœীতলা উপজেলায় অবস্থিত। নওগাঁ-১ এর অধীনে নওগাঁ সদর, বদলগাছী, নিয়ামতপুর, মান্দা, রাণীনগর ও আত্রাই এই ছয়টি অফিস পরিচালনা হয়ে থাকে। এই ছয়টি অফিসের তত্তাবধানে ২ হাজার ১৫১টি গভীর নলকূপ আছে। এর বিপরীতে উল্লেখিত জন অপারেটর চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। যার আবেদন পড়ে মোট ৩হাজার ৬৭টি। এর মধ্যে নওগাঁ সদরে ২৪৯ টি গভীর নলক‚পের খন্ডকালীন অপারেটরের বিপরীতে ২৭৭ টি আবেদন ফরম বিক্রয় হয়, নিয়ামতপুরে ৬০৪ টির বিপরীতে এক হাজার ৭৬টি, মান্দায় ৪৮৪ টির বিপরীতে ৭৬৪টি, রাণীনগরে ২৬২টির বিপরীতে ৩৩০ টি, আত্রাইয়ে ২৬২টির বিপরীতে ২২৭টি আবেদন জমা পড়ে এবং বদলগাছীতে ২৯০টি অপারেটরের বিপরীতে ৩৯৩ টি আবেদন ফরম বিক্রয় হয়।

এরপর যাচাই-বাছাইয়ের পর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ফলাফলের ভিত্তিতে চুড়ান্তভাবে নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। বদলগাছী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অফিস সুত্রে জানা যায়, গত ৩নভেম্বর উপজেলার ২৯০টি গভীর নলক‚পের খন্ডকালীন অপারেটর নিয়োগ আহবান করে কর্তৃপক্ষ। ১৫ই নভেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এক হাজার টাকা করে ৩৯৩ টি আবেদন ফরম বিক্রয় হয়। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩৬৪ টি আবেদন অফিসে জমা হয়। দীর্ঘ এক মাস যাচাইবাছাই শেষ করে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষার জন্য আবেদনকারীদের ডাকা হয়। এরপর ৩০শে ডিসেম্বর নামের তালিকা অফিসে টাঙানো হয়। একইভাবে অন্যান্য উপজেলার অফিসেও চুড়ান্তভাবে নামের তালিকা প্রকাশ করে অফিসে টাঙানো হয়। এরপর শুরু হয়ে যায় সমালোচনা-আলোচনা।

 

এরমধ্যে বেশি অভিযোগ উঠেছে জেলার বদলগাছীতে। এরপর নিয়ামতপুর। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাতেও রয়েছে অভিযোগ। প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য না করলেও মৌনভাবে অখুশি তারা। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর অপারেটর হিসেবে দায়িত্বে থাকা আওয়ামীলীগ সমর্থিত বা পদধারী কাউকে নিয়োগ দিলে সেটা মেনে নিতে নারাজ অন্যান্যরা।

নিয়োগ না পাওয়া ও কৃষকদের অভিযোগ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোক দেখানো মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করে বিতর্কিত ও অগ্রহনযোগ্যদের পাশাপাশি আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এসবের নেপথ্যে রয়েছে বদলগাছী উপজেলায় দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী ইন্তেখাফ ও উপ সহকারী জাহাঙ্গীর আলম।


স্থানীয়রা বলছেন, অপারেটর নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে সরকারি, বেসরকারী, চাকুরিজীবি, এসটিডবিøউ মালিক, নলক‚প স্কীমে তার নিজস্ব ফসলি জমি থাকতে হবে এবং নারী-পুরুষ অপারেটর হলে রাতে নলক‚পের ঘরে থাকতে হবে ইত্যাদি শর্ত দেওয়া হয়েছে। অথচ নীতিমালা বর্হিভ‚তভাবে তাদের নামই স্থান পেয়েছে। আবার যারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গভীর নলক‚প নিয়ন্ত্রণ রেখে সাধারন কৃষকদের শোষণ করে মোটাতাজা হয়েছে, তাদের নামেই অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সাধারণ কৃষকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। জেলাসহ উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপার ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

বদলগাছী উপজেলার সোহেল, তসলিম, সেলিম, আজাহার সহ কয়েকজন কৃষক বলেন, বরেন্দ্র অফিস লোক দেখানো একটি মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। অতি গোপনে টাকার বিনিময়ে অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করে। এতে প্রকৃত কৃষক অপারেটর নিয়োগ হতে বঞ্চিত হয়েছে। তাই আমরা কয়েকজন কৃষক উপজেলা সেচ প্রকল্প সভাপতি, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও বরেন্দ্র চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অপারেটর নিয়োগ স্থগিত করে প্রকৃত কৃষকদের অপারেটর নিয়োগের দাবি জানাই।

নিয়ামতপুর উপজেলা থেকে নওগাঁ-১ অফিসে এসেছেন শাহজামান মন্ডল। তিনি এসেছে তার স্ত্রী আমেনা খাতুনের জন্য। তিনি বিএনপির একজন একনিষ্ট কর্মী দবি করে অভিযোগের সুরে বলেন, শাহিন ইকবাল নামের একজনকে অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা পুরোপুরি অবৈধ। কারণ শাহিনের বাবা বেলাল মন্ডলের আশনদী মৌজায় একটি (থ্রি ফেজের ডিটিডাব) গভীর নলকূপ আছে। তারপরও সে একই মৌজায় অন্য আরেকটি গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। তাই তিনি অভিযোগ দিবেন।

তার সাথে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি বেলাল। তিনি তার ভাতিজা শাহ আলম নামের এক যুবককে নিয়ে এসেছেন। শাহ আলমের নাম নিয়োগ তালিকায় প্রকাশ হয়নি। তাই তারাও বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী দাবি করে বলেন, একই ইউনিয়নের সাড়া মৌজায় রাকিবুল ইসলাম নামের একজনকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার বাবা বিএনপির সাথে জড়িত থাকলেও রাকিবুল ছাত্রলীগের ছেলেদের সাথে ঘুরতো, এছাড়া সে সিনোড়া নামের আরেক মৌজার বাসিন্দা এবং সে রাজশাহীতে পড়াশোনা করে, তাই তার নিয়োগ অবৈধ। আবার নলকূপের যে মালিক, সেও আমাদেরকে সাপোর্ট করেছিল। তারপরও কোনো অদৃশ্য কারণে শাহ আলমের হয়নি। এই জন্য আমরা অভিযোগ দিতে এসেছি।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রকৌশলী ইন্তেখাফের বলেন, নিয়ম মেনেই খন্ডকালীন অপারেটর নিয়োগের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যদি কোনো মালিক ও চাকুরিজীবির নামে অভিযোগ থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বদলগাছী উপজেলা সেচ প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওগাঁ-১ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, চুড়ান্তভাবে মনোনীত ব্যক্তির বিজ্ঞপ্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়নি। তাই যদি কারো কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে তদন্ত করে বিষয়টি দেখা হবে। অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর স্ব স্ব উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা মোটেও ঠিক না। আমরা নিয়ম মেনেই নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। এছাড়া নিয়োগের তালিকা সংযোজন-বিয়োজন করার সুযোগ আছে, প্রয়োজনে করা হবে।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!