মনোনয়ন বাণিজ্য, দুর্নীতি ও লুটপাট করে অঢেল অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সেই টাকায় কিনেছেন লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি-গাড়ি। এর বাইরে দেশে-বিদেশে রয়েছে সম্পদের পাহাড়। যার সবই অর্জন করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রভাবশালী মন্ত্রীদের সহযোগিতায়।
যাকে নিয়ে এতো কথা তিনি টিএম জোবায়ের। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রভাবশালী ডিজি। তার বিরুদ্ধে সব থেকে বড় যেসব অভিযোগ উঠেছে, চাঁদাবাজি, লুটপাট, গুম করে অর্থ আত্মসার্থ, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্মের। আর এসব করেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাট করে অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগের একটি কপি এসেছে হাতে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে- টি এম জোবায়ের ছিলেন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একসময়কার চরমপন্থী সর্বহারা নেতা মৃত রউফ তালুকদারের ছেলে। বাংলাদেশের অন্যতম মাফিয়া, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW এর এজেন্ট, ঠান্ডা মাথার খুনি ও বিভিন্ন অপকর্মের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী। শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা, অব. মেজর জেনারেল, তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সালমান এফ রহমান ওরফে দরবেশ বাবা, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, পরিবহন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এনায়েতুল্লাহ, পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং প্রাক্তন বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশে দেশে চালিয়েছে চাঁদাবাজি, লুটপাট, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম করতেন।
যেভাবে সম্পদের পাহাড়ে জোবায়ের
ঢাকার গুলশান-২, ৮৪ নাম্বার রোডে লেকের ধারে একটি বিশাল বাড়ি দীর্ঘ ৪৫ বছর যাবৎ এনএসআই’র কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমন একটি রাষ্ট্রীয় বাড়ি টিএম জোবায়ের গণপূর্তের মাধ্যমে তার আত্মীয়ের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দখলে নিয়েছে। যা দেখার কেউ নেই।
তার ব্যবসায়িক বন্ধু আকবর সোবহান শাহ আলমের পুত্র বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি তানবীর আহম্মেদ সানভির নারী কেলেঙ্কারি মামলা থেকে বাঁচাতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে বাগিয়েছেন বসুন্ধরার প্লট ও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ। এছাড়াও গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় রিসোর্ট ও গাজীপুর সদরে গড়েছেন বহুতল বাড়ি। এছাড়াও রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে নিজের ও বোনের নামে ফ্লাট। উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটে ৩-৪ টি দোকান, রংপুরে ফসলি জমি দখল, ঢাকার পূর্বাচল ও বসুন্ধরা প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। সেগুনবাগিচায় ফ্লাট, ধানমন্ডি ৭/এ ফ্লাট ও সাভার ডিওএইসএস ১০তম তলা বাড়ি করেছেন।
দেশে-বিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি
টিএম জোবায়ের নিজের গ্রামে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। এছাড়া অধিকাংশ অর্থই তিনি লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুরে ও তুরস্কে পাচার করেছেন। লন্ডন, তুরস্ক, দুবাইয়ে তৈরি করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। জোবায়ের কয়েকজন পার্টনার নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এসব দেশের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখভালের জন্য নিজের অযোগ্য সেবাদাস ভৃত্য টাইপের অফিসারদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে পোস্টিং দিয়ে চাকরের মতো কাজে লাগিয়েছেন।
জোবাযের লন্ডনে ২৯ লাখ ৪৫ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের একটি আলীশান বাড়ি কিনেছেন। লন্ডনের বেক্সলি এলাকার হেথ কর্ফট ওযানসান্ট সড়কের ৭ নাম্বার বাড়িটি (7 Heath croft, Wansunt Road, BEXLEY, DA5 2DN) লন্ডনের ক্রয়ডন এইচআর ভূমি রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রেশন করা হযেছে তিনজনের নামে। তারা হলেন- টি এম জুবাযের, এফ মাসুদ এবং মোহাম্মদ এস ইবনে জুবায়ের নামে।
রেজিস্ট্রেশনে উল্লেখ করা হয়েছে- এফ মাসুদ, টিএম জুবাযেরের স্ত্রী ফাহমিদা মাসুদ এবং মোহাম্মদ এস ইবনে জুবায়ের তাদের ছেলে। এই বাড়ি কিনতে কোনো ব্যাংক ঋণ নিতে হয়নি। অর্থাৎ নগদ মূল্যে কেনা হয়েছে। দলিলটি স্থানীয় কাউন্সিল অফিস থেকে ভেরিফাই করা হয়েছে।
দরবেশ বাবার নির্দেশে মানি এক্সচেঞ্জ এজেন্সি লুটপাট
জোবায়ের দরবেশ বাবা হিসেবে পরিচিত সালমান এফ রহমানের পরামর্শে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার নাটকীয় ফেইক অভিযান পরিচালনা করে। যাতে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ এজেন্সির কাছে থেকে কোটি কোটি টাকার ডলার আদায় করেছেন। মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছে ঘুষ ও টাকা পয়সা নেওয়ার তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
এনএসআইয়ের অফিসার পদে চাকরির নামে ঘুষ
এসএসআইয়ে থাকাকালীন চাচাতো ভাই জহিরকে দিয়ে ৫০ জনকে চাকরি দিয়েছেন টি এম জোবায়ের। সংস্থাটির অফিসার পদে নিয়োগ দিতে জনপ্রতি নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। এর বাইরেও এই ভাইকে দিয়ে শতশত কোটি টাকার বিভিন্ন দপ্তরের কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
যেভাবে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জোবায়ের
তার ভাইরা ভাই কাইয়ুম। তিনি জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিলেন। একাজে তাকে সহযোগিতা করতেন বিমানবন্দরে অবস্থিত এনএসআই কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক গোপাগঞ্জের বদরুল হাসান চৌধুরী।
এনএসআইতে ত্রাসের রাজত্ব
এনএসআই দেশের একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এখানেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যা আগে কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারেনি। নিজের অপকর্ম আড়াল করতে অন্যদের প্রতি জুলুম করতেন। এক কর্মকর্তার পেটে লাথি মেরেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং সৃষ্টি করে অনেক নিরীহ সেনা অফিসারদের ক্ষতি করেছেন।
অবসরে গিয়েও কমেনি দাম্ভিকতা
শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা শেখ রেহানার দেবর তারিক আহম্মেদ সিদ্দিকীর সহযোগী হিসেবে জোবায়ের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনের বিরুদ্ধে। ছাত্রদের উপর হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়েছেন। আগের পরিচয়ে দেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। নিষ্ঠুর আয়নাঘর তৈরি করেছেন নিজেও। সেনা প্রধান ও অন্তর্বর্তীকালীন বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে ক্যু করার পরিকল্পনা করে এনএসআই’কে জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :