ছাদ ও দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। বৃষ্টির সময় বাঁশ আর কাঠের খুঁটিতে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে ছাদ। আশঙ্কা, যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এর মধ্যেই প্রাণ হাতে নিয়ে বসবাস করছেন ২০টি পরিবারের শতাধিক মানুষ।
এমন বেহাল অবস্থা বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি রোড আমতলা পানির ট্যাংকি সংলগ্ন ৮২ ইউনিট সরকারি কোয়ার্টারের (সিএন্ডবি কোয়ার্টার)।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ দ্বিতল ও তিনতলা ৮টি ভবনের দরজা-জানালা, সিঁড়ির রেলিংয়ের কাঠ খসে গেছে কয়েক জায়গায়। ভবনের গায়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে ঝোলানো সতর্কবাণীতে লেখা `ভবনগুলো বসবাসের অনুপযোগী, এখানে অবৈধভাবে বসবাসরত সকল ফ্লাট খালি করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অবৈধভাবে বসবাসরত সকল ফ্লাটের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হবে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।` অথচ সেই সেই ভবনগুলোর কয়েকটি ফ্লাটে ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন বেশ কয়েকজন সরকারি দপ্তরের কর্মচারীরা।
বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায় একবছর আগে ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ভবনগুলোতে বসবাসরত সবাইকে ফ্লাট খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ৮২টি পরিবারের মধ্যে অধিকাংশই নেমে যায়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও এখনো প্রায় ২০টি পরিবারের শতাধিক লোকজন অবৈধভাবে ভবনগুলোতে বসবাস করছেন। তাদের নামানোর জন্য কোয়ার্টারের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করা হলেও পরবর্তীতে মানবিক বিবেচনায় আবার সংযোগ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে বসবাসরত ২০টি ফ্লাটের মধ্যে ১২টি ফ্লাট গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারীদের দখলে, ৩টি স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দখলে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারীদের দখলে ২টি, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষীর দখলে ১টি ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক এক নার্সের দখলে রয়েছে ১টি। গত এক বছর আগে ভবনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর থেকে আর কেউ ভাড়া দিচ্ছেন না বলেও জানান সেখানে বসবাসরতরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শতবছর বয়সী কোয়ার্টারের কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় বহিরাগতরা বিভিন্ন ভবনের খালি ফ্লাটে উঠে মাধক সেবানসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে। এমনকি তারা ভবনগুলোর দরজা জানালা খুললে বিক্রি করেও ফেলছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইসলাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে রয়েছি, ছেলে মেয়ে আসেপাশের স্কুল কলেজ লেখা পড়া করে। তাই ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তবুও নিজেরা মেরামত করে থাকছি। সময় সুযোগ বুঝে অন্যত্র চলে যাবো।
বরিশাল জেলা জজের সাবেক গাড়ি চালক আব্দুল সত্তার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও থাকছি কারণ দীর্ঘদিন থাকার কারণে এখানে সবার সাথে একটা হৃদ্যতা হয়েছে। তাছাড়া নিজেদের বাড়ি ঘরের মতো ফ্লাটের আশেপাশের আঙিনায় সবজির চাষ করে খাওয়া গেছে। শীঘ্রই নতুন বাসা দেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে যাবো।
এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, ভবনগুলো থেকে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে একাধিক দূর্ঘটনার খবর পেয়েছি। পরে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে বসবাস অনুপোযোগীর নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। তবুও ২০টি পরিবার সেখানে বসবাস করছে।
তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নামানোর জন্য কোয়ার্টারের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করাও হয়েছিলো। পরে মানবিক বিবেচনায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে পূণরায় সংযোগ দেয়া হয়। তবে যাতে বড় ধরনের কোনো দূর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য ভবনগুলো অচিরেই ভেঙে ফেলা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :