ঢাকা শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫

তুরাগে আ. লীগ নেতাদের মঞ্চে নিয়ে বিএনপি নেতার প্রতিবাদ সভা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৪, ০৯:০০ পিএম

তুরাগে আ. লীগ নেতাদের মঞ্চে নিয়ে বিএনপি নেতার প্রতিবাদ সভা

রাজধানীর তুরাগ থানা কৃষক লীগের ভূমি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবু সেলিম ওরফে সেলিম মাদবরকে মঞ্চে নিয়ে মাদকবিরোধী প্রতিবাদ সভা করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা হাজী মোস্তফা জামানের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মোস্তফা জামানের হাত ধরেই মো. আবু সেলিম ওরফে সেলিম মাদবর কৃষক লীগের পদে থাকা অবস্থায় তুরাগ থানাধীন উত্তর সিটির ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন।

শনিবার (০৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী মোস্তফা জামান।

এ সময় মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন, তুরাগ থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক হারুনুর রশিদ খোকা, যুগ্ন আহবায়ক আলী আহমেদ, ৫২ ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সহ-সভাপতি শামীম আহমেদ, সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা, হাজী জহির, যুগ্ন আহবায়ক রিপন আহমেদ, যুগ্ন আহবায় বিপ্লব তুরাগ থানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সদস্য আফাজ উদ্দিন আফাজ।

এছাড়াও মঞ্চে আওয়ামী লীগের যারা উপস্থিত ছিলেন- তুরাগ থানা কৃষক লীগের ভূমি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবু সেলিম ওরফে সেলিম মাদবর, যুবলীগের কর্মী সানাউল্লাহ ও আবু তাহের, সোহেল রানা, সাবেক এমপি হাবিব হাসানের মামাতো ভাই কামালের সঙ্গে রাজনীতি করেন আশরাফ খান।

প্রতিবাদ সভার মঞ্চে থাকা অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বাইরে সভাটিতে উপস্থিত প্রায় দুই থেকে তিনশত লোকের মধ্যে ৫০ শতংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।

বিএনপির এমন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় সাধারণ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিএনপির রাজনীতি নিয়ে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু বিএনপি পরিবারই নয় ক্ষিপ্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকাকালীন বিভিন্ন মিছিল মিটিং এর ছবিসহ পোস্ট করতে দেখা গেছে।

বিএনপির রাজনীতি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছেন এবং বিভিন্ন ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। এতে, কিছুটা হলেও দলের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ম হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে, যেসব নেতা বা উপস্থিত ব্যক্তিরা শনিবার (০৫ অক্টোবর) মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন তাদের অধিকাংশই তিন মাস আগেও আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের পক্ষে মিটিং মিছিলে বেশ সক্রিয় ছিলেন। শুধু তাই নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন এই নেতাকর্মীরা।

রাজনৈতিক পালাবদলের পর পর তারা এখন বিএনপি নেতার মিটিংয়ের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির অনেকের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক পদধারী নেতারা জানান, শনিবার (০৫ অক্টোবর) হাজী মোস্তফা জামান যে প্রতিবাদ সভাটি করেছেন, সেখানে উপস্থিতির ৫০ শতাংশ আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দুই মাস আগেও তার এই দলের ছিল। সবশেষ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলাও চালিয়েছেন তারা। যা এলাকার সবাই জানে। তারাই আজ কীভাবে ভোল পাল্টিয়ে বিএনপির মিটিংয়ে আশ্রয় নেন।  

স্থানীয়রা বলেন, রাজধানী তুরাগের বাউনিয়া এলাকাটি ফ্যাসীবাদ সরকারের সাবেক এমপি ও উত্তরার ছাত্রজনতা হত্যার মূলনায়ক হাবিব হাসানের নিজ গ্রাম এবং তার নানাবাড়ী এলাকা হওয়ায় বিএনপির তেমন কোনো কার্যক্রম গত ১৮ বছরে পরিচালনা করা যায়নি। বিএনপির যারা ত্যাগী নেতা ছিলেন তারা ঘর ছাড়া ছিলেন।

কিন্তু শনিবার (০৫ অক্টোবর) মিটিংয়ের পর দেখা গেছে বিপরিত চিত্র। প্রতিবাদ মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন পদধারি নেতা। তাদের অন্যতম হচ্ছে, তুরাগ থানা বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, আওয়ামী যুবলীগের সোহেল রানা, সানাউল্লাহ, কৃষক লীগ নেতা সেলিম মাদবর, তুরাগ থানা কৃষক লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হাজী আব্দুল্লাহ ও আশরাফ খান।

এছাড়াও এর বাইরে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া আবু তাহের আবুল খানসহ অনেকেই। প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ ছিলেন হাবিব হাসানের নিকট আত্মীয় স্বজনরাই।

উল্লেখ্য, ঢাকা-১৮ আসন এলাকায় বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা হাজী মোস্তফা জামানের বিরুদ্ধে রুপায়ন গ্রুপসহ বিভিন্ন জায়গায় হুমকি-ধামকি, দখল চাদাবাজির অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে সর্তক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও, গত ১৮ বছর যারা আওয়ামী লীগের হয়ে এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতন চালিয়েছেন তাদের নিয়ে দলভারী করার শক্ত অভিযোগ আছে মোস্তফার বিরুদ্ধে।

মোস্তফা মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হকের কাছের লোক হওয়ায় কোনো অভিযোগের বিষয়ে তোয়াক্কা করছেন না বলে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে খারাপ কিছু লেখা হলে স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি প্রায়ই দিয়ে থাকেন তিনি।

এসব বিষয়ে হাজী মোস্তফা জামান বলেন, ‘সেলিম মাদবর এক সময় বিএনপির কর্মী ছিলেন। এজন্য সে পদ পেয়েছে। সে আওয়ামী লীগের বর্তমানে কোনো পদে নেই। আপনি যে অভিযোগ করছেন তা মিথ্যা। আপনি ভালো করে বিষয়টি যাচাই-বাচাই করতে পারেন। আওয়ামী লীগের কর্মী বিএনপির পদ পাবে, এমন কোনো প্রশ্নেই উঠে না।’

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!