ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ইসমাইল মিয়ায় মজেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

ইসমাইল মিয়ায় মজেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক!

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গোপনে পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি নবায়নের কার্যক্রম চলছে। পরামর্শক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নির্দেশনাও মানছে না ব্যাংকটি। এক মো. ইসমাইল মিয়াকেই ৬ষ্ঠবারের মতো নিয়োগ দিতে যাচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। তার মেয়াদ শেষ হলেও আরেকদফা বাড়ছে এই পরাশর্মকের মেয়াদ। আগের কোনবারই তাকে পরামর্শক নিয়োগে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আগে থেকেই সবকিছু চূড়ান্ত। এখন কেবল ঘোষণার বাকী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ব্যাংকটির বোর্ড মিটিংয়ে জানানো হবে এই সিদ্ধান্ত।

জানা গেছে, ব্যাংকটির পরামর্শক মো. ইসমাইল মিয়া ২০১৬ সালে গঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন জনবলের চাহিদার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক হতে ২০১৮ সালে সহকারী মহাব্যবস্থাপক প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। তারপর থেকেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছেন এই কর্মকর্তা। 

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের তার আগমন:

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে প্রেষণে চাকরিরত অবস্থায় চাকরির বয়স শেষ হয় তার। এরপর সে মাসেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ২০১৬ সালের প্রবিধানমালার ধারা ৫ এর উপধারা (৮) অনুযায়ী সহকারী মহাব্যস্থাপক পদমর্যাদায় কনসালটেন্ট বা পরামর্শক হিসেবে নিয়ম ভঙ্গ করে ২ বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে ২০২০ সালের ১লা মে মাস হতে তাকে ১ বছরের পুনরায় নিয়োগ দেয়া হয় এবং সে মেয়াদান্তে ২০২১ সালের ১লা মে হতে তাকে আবারও ১ বছরের জন্য ৩য় বার নতুনভাবে নিয়াগ দেয়া হয়। 

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে আবার নিয়োগ: 

২০২২ সালে প্রণীত নতুন প্রবিধানমালায় পরিচালনা বোর্ড কর্তৃক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের উক্ত ধারা তুলে দেয়া হয় এবং এ ধরনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রবিধান পরিবর্তনের কার্যক্রমের সাথে মো. ইসমাইল মিয়া নিজেই জড়িত থাকায় নতুন প্রবিধানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধের এই তথ্য সম্পর্কে তিনি আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলেন। যে কারণে ব্যাংকের বোর্ড সচিবের দায়িত্বে থাকার সুবাদে তার কুটকৌশল কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালে ৩য় মেয়াদে ১ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালনকালেই ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর  অনুষ্ঠিত ৭১ তম সভায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য বৃদ্ধি করে নেন। পরিচালনা বোর্ডের জাদুর গালিচায় বসে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে পরামর্শক হিসেবে তার ভ্রমণ সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ২০২৪ সালে পুনরায় তার চুক্তির মেয়াদ সম্পর্ণ অবৈধভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।

পরামর্শক নিয়োগে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা: 

মো. ইসমাইল মিয়া-কে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন ধরনের নিয়ম-নীতি না মানার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ডের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধির সময় পরিচালনা বোর্ডে কোন প্রস্তাবনা বা মেমো উত্থাপন ছাড়াই তার পদের মেয়াদ ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রণীত বিআরপিডি সার্কুলার নং ১৯/২০১৩ এ উল্লেখ রয়েছে যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন কোন ব্যাংকে পরামর্শক নিয়োগের জন্য অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন পূর্বানুমোদন ছাড়াই মো. ইসমাইল মিয়া-কে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

ব্যাংকের সাংগাঠনিক কাঠামোতে চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক পদের অস্তিত্ত্ব না থাকলেও প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করে বার বার তাকে চাকরির সুযোগ করে দিয়ে দিচ্ছে পরিচালনা বোর্ড। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে পরপর ৩ বার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিশদ পরিদর্শনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে আপত্তি প্রদান করেন। ব্যাংকের অন্যান্য পরামর্শকদের চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করা হলেও ৬৬ বছর বয়সী মো. ইসমাইল মিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আপত্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, পরামর্শক পদের মেয়াদ সাধারণত ১ বছর হবে। তবে পরামর্শক কর্তৃক অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সা পেক্ষ্যে সর্বোচ্চ আরো ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে।

কিন্তু মো. ইসমাইল মিয়াকে কোন নিয়ম না মেনেই বছরে পর বছর চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে ব্যাংকটির পরিচালনা বোর্ড। সাধারণত বিশেষায়িত কোন কাজ যেমন আইনী পরামর্শ, ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনিক্যাল কাজ, আইটি সম্পর্কিত কাজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে পরামর্শক নিয়োগের কথা থাকলেও কোন বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও মো ইসমাইল মিয়াকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকের কোন রুটিন ওয়ার্ক পরামর্শকদের মাধ্যমে না করানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও এক সময় মো. ইসমাইল মিয়া পরামর্শক পদে থেকেও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে একাই ব্যাংকটির প্রায় সকল দপ্তরের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পালন করছেন।

তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ:

মো. ইসমাইল মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। ব্যাংকের অন্যান্য সহকারী মহাব্যবস্থাপকগণ ব্যাংকের কোন গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা না পেলেও মো. ইসমাইল মিয়া অদৃশ্য ক্ষমতাবলে গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করে আসছেন।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের শর্তানুযায়ী ব্যাংকের ইনসেনটিভ বোনাস না পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি প্রতিবারই অবৈধভাবে ইনসেনটিভ বোনাস নিয়ে থাকেন। ব্যাংকের শুরুর দিকে কয়েক বছর অবৈধভাবে একাই সকল দপ্তরের প্রধান থাকার সুবাদে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!