ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫

সান্তাহারে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

মো:মাইন, আদমদিঘী, বগুড়া

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৬:২২ পিএম

সান্তাহারে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি: বর্তমান বাংলাদেশ।

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রেন্টু দাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগে উঠে এসেছে গবেষণা কাজে বরাদ্দকৃত অর্থ ও শ্রমিকের অর্থ আত্মসাতসহ নামে বেনামে বিভিন্ন ভূয়া ভাউচারে বিল উত্তোলন করেন তিনি। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শ্রমিকদের সাথে স্বেচ্ছাচারীতা করারও অভিযোগ এসেছে। আর এসব কর্মকান্ডে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। বিষয়টির সুরাহা পেতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বরাবর গত ১৮ নভেম্বর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মৎস্যজীবী। তবে ঘটনার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ফলে উপকেন্দ্রেটিতে তার একক আধিপত্য বিস্তারের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভূক্তভোগীরা।

জানা যায়, বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু উদ্ভাবন করে পুনরায় উজ্জীবিত করাই হলো মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধানলক্ষ্য। এইজন্য সরকার প্রতি বছরে এই গবেষণার কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেন। পরিচালনার জন্য প্রত্যেকটি ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেন। যারফলে এই ইনস্টিটিউট গবেষণা কাজে উন্নয়ন ও সফলতা নিয়ে আসতে পারে৷ অথচ দেশের কয়েকটি ইনস্টিটিউটের মধ্যে সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রে উদ্ভাবনের লক্ষ্যমাত্রা সীমিত। নাম মাত্র আবিষ্কার কাগজে কলমে সফলতা দেখান প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রেন্টু দাস। আর সফলতা দেখিয়ে বরাদ্দকৃত বিপুল অর্থ লোপাট করেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, ড. ডেভিড রেন্টু দাস গত ২০১৪ সালে সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর দীর্ঘ এক যুগ একই প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সখ্য গড়ে উঠে অনেকের সাথে। সবকিছু তার চেনা জানা হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েন অনায়াসে। অভিযোগ পাঙ্গাসের আগাম ব্রুড উৎপাদন, বাতাসী ও পিয়ালী মাছের কৃত্রিম প্রজননের সফলতা প্রচার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে মাছচাষীদের কেউ এই রেনুগুলো পায়নি। শুধু তাই নয় দশ জন দৈনিক শ্রমিকের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও পাঁচজন শ্রমিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানে কাজ করান। বাকি শ্রমিকের ভুয়া নাম দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। আবার শ্রমিকপ্রতি বরাদ্দ হয় বছরে আড়াই লাখ টাকা। অফিসে ড্রাইভার নেই, অথচ গাড়ীর মেরামত ও জ্বালানী হিসেবে আসা লাখ লাখ টাকা। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী কেনার ভুয়া বিল করা হয়। একযুগ ধরে এই টাকাগুলো ভূয়া বিল ভাউচার তৈরি করে দিনের পর দিন আত্মসাৎ করেছেন তিনি, রেখেছেন নিজের পকেটে। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের জন্য উপকেন্দ্রের কেনাকাটায় টেন্ডার বা আরএফকিউ পদ্ধতি ছাড়াই সরাসরি ক্রয় করে থাকেন।

এদিকে, নিজের অনিয়মের বৈধতা দিতে জুন ক্লোজিং শুরুর আগে হিসাবরক্ষককে একটি চার লাখ টাকার মোটরসাইকেল উপহার দেন ড. ডেভিড রেন্টু দাস। ফলে রেজিস্ট্রার বা ভাউচারে একদিন পুরো অর্থ বছরের স্বাক্ষর করে দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অফিসে অন্যান্য স্টাফদের জন্য মোটরসাইকেল বরাদ্দ থাকলেও সেটার ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়না। স্থানীয় প্রাইভেট হ্যাচারী থেকে নিম্নমানের রেনু নিয়ে উপকেন্দ্রের উদ্ভাবন দেখিয়ে চড়া দামে বিক্রি করে চাষীদের সঙ্গে প্রতারণা করেন। এমন অভিযোগ করেন অফিস স্টাফরা। এদিকে সপ্তাহে তিন দিনের বেশি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। বাকী দিনগুলো তাঁর স্ত্রীর ঔষধের ব্যবসা দেখভাল করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ আসলেও সেটা তিনি নিজে ভোগ করতেন। অফিস সহকারী কম্পিউটার অপারেটরকে ৫ বছর ধরে ওএসডি করে রেখেছেন। এসিআরও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ না করার ফলে প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন ওই অপারেটর।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন স্টাফদের বৈষম্য করে রাখেন৷ অফিসে বসার কেউ জায়গা পেলেও কারো ভাগ্যে জোটেনা। বসার জায়গায় গরমের সময় এসি তো দূরের কথা, প্রয়োজন অনুসারে ফ্যান লাগিয়ে দেননা তিনি। ফলে গরম কালে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে তার আস্থাভাজন হলে সব সুবিধা পাওয়া যাবে। যেনো দেখার কেউ নাই।

সান্তাহারে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রেন্টু দাস জানান, আমার নামে অভিযোগগুলো সম্পন্ন ভিত্তিহীন। অফিসের স্টাফরা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। কম্পিউটার অপারেটারের যিনি দায়িত্বে সে কোন কাজ করেনা। তাছাড়া বরাদ্দকৃত অর্থ গবেষণা কাজে ব্যবহার হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিশাখার যুগ্মসচিব শাহীনা ফেরদৌসী জানান, অভিযোগ ও তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে যদি আমাদের কাছে কেউ লিখিত আবেদন করেন। তাহলে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বর্তমান বাংলাদেশ

Link copied!