মৌলভীবাজার শহর ও আশপাশ এলাকায় বসবাস করেন এমন শ্রমজীবী বহু মানুষ। প্রতিদিন তারা শহরের বিভিন্ন সড়কে শ্রম বিক্রির হাটে একাট্টা হন। তীব্র শীত আর ভোরের ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বাঁশের ঝাকা আর কোঁদাল নিয়ে এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন অনেকে। অপেক্ষা শুধু নিজের শ্রম বিক্রি করার। মূলত একদিনের জন্য নিজের শ্রম বিক্রি করতেই এখানে এসেছেন তারা। দেশের স্মার্ট যুগেও ভোর বেলার এই শ্রম বিক্রির হাটের ওপর এখনও এরা নির্ভরশীল। ২৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জেলা সদরের চৌমোহনায় জড়ো হন। কোদাল, টুকরি, বেলচাসহ অপেক্ষার প্রহর গোনেন কর্মের সন্ধান পাওয়ার অপেক্ষায়এমনই দৃশ্য দেখা যায়। এ দৃশ্য একদিনের নয়, প্রতিদিনের।পৌর এলাকার শহরতলির বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাওয়ার আশায় জেলা সদরের চৌমোহনায় ভিড় করেন।
সারাদিন ঘাম ঝরানো কঠোর পরিশ্রমে শেষে সন্ধ্যা বেলায় নিজের শ্রম বিক্রির টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে যান এই পরিশ্রমী মানুষগুলো। তবে তাদের মুখেও শুনা যায় বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্য নিয়ে নাভিশ্বাস আক্ষেপের কথা। সম্প্রতি কাজ দেওয়ার লোক কম আসায় শ্রমবাজারে মন্দা চলছে। তাই পর্যাপ্ত কাজ জুটছে না। কাজ না পেয়ে নিরস মুখে ফিরে যেতে হয় তাদের। স্থানীয়ভাবে কামলার হাট নামে পরিচিত এসব স্থানে শ্রমজীবী মানুষের জোগান পর্যাপ্ত থাকলেও নেই কর্মসংস্থান। ফলে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হচ্ছে শ্রমজীবী পরিবারগুলোকে।শ্রম বিক্রির হাটে আসা এই পরিশ্রমীদের কাজ পেলে মুখে হাসি ফুটে, না পেলে মলিন মুখ নিয়ে অপেক্ষা করতে হয় পরের দিনের জন্য। এভাবেই চলছে তাদের জীবন।
সরেজমিনে দেখা যায়, নজিম উদ্দিন, কোরবান আলী ও দুলাল মিয়া। এছাড়া আরও অনেকের হাতে নানা উপকরণ। তারা দলবেঁধে শ্রম বিক্রির জন্য বসে আছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। আর ক্রেতা এসে তাদের শ্রমের দরদাম করছেন। দাম ঠিকঠাক হলেই গৃহস্থালী কিংবা কৃষি কাজে নিয়োজিত হন তারা। কারও কারও ভাগ্যে কাজ জোটে। কেউবা বেকার থেকে যান। ফিরে যান শূন্য হাতে।
এভাবে প্রতিদিন শহরের কামলার হাটে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের জমায়েতকে ঘিরে ভোররাত থেকে ভ্যান-রিকশায় চা-বিস্কুটের দোকান সাজিয়ে ব্যবসা করেন অনেকে।
মো. আলম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৬টায় এলে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যেই বেশির ভাগ শ্রমিক কাজ পেয়ে যান। ফলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অনেক শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন না। এতে শ্রমিকেরা অনেক কষ্টে আছেন। জেলার প্রায় সব স্থানেই একই অবস্থা।
মো. নওশের আলী জানান,তার নিজের বাড়ি ছাড়া অন্যকোনো জায়গা বা সম্পত্তি নেই। ছেলে নেই, একটি মাত্র মেয়ে, যাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তাই নিজের বাসা ভাড়া আর দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জন্য নিজের উপার্জন নিজেকেই করতে হয়।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মোহনপুর গ্রামের সাইমন বাস করেন মৌলভীবাজার শহরতলির সাবিয়া গ্রামের একটি কলোনিতে। তিনি জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খরচের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে স্ত্রী। কী কী বাজার করতে হবে, তাও বলে দিয়েছে। এ জন্য এই তিস্তা বাজার মোড়ে তার বিক্রি হওয়াটা জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :